ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের ‘জনকই’ তদন্ত কমিটির প্রধান! নিউজ ৭১ অনলাইন নিউজ ৭১ অনলাইন প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১১, ২০২০ রোজার ঈদের আগে করোনার কারণে দুই মাসের বিদ্যুৎ বিল এক সঙ্গে দেয়া হয়৷ আর তখন ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ ওঠে৷ বিদ্যুৎ বিভাগের নানা অজুহাতের পর এখন জানা গেলো ‘সাফল্য দেখাতেই’ অতিরিক্ত বিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷আর সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আইসিটি বিভাগের পরিচালক এসএম শহিদুল ইসলাম৷অবাক করা ব্যাপার হলো ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ ওঠার পর ডিপিডিসি তখন যে তদন্ত কমিটি করে তার প্রধান এই শহিদুল ইসলামই৷ তার সুপারিশের ভিত্তিকেই আবার কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড এবং শোকজ করা হয়৷গত মার্চ-এপ্রিল মাসের ভুতুড়ে বিল নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে৷ এরপর নানা ধরনের তদন্ত কমিটি হলেও গ্রাহকরা কেনো সমাধান পাননি৷ জরিমানা মওকুফ করা হলেও বাড়তি বিল ঠিকই দিতে হয়েছে৷ যারা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন তাদের বিল পরে সমন্বয়ের কথা বলা হয়৷তখন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স তাদের তদন্তে ৬২ হাজার ৯৬ জন গ্রাহকের বিলে অসঙ্গতি পায়৷ এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোডের্র (আরইবি) ৩৪ হাজার ৬১১ জন গ্রাহক, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির(ডিপিডিসি) ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ঢাকা ইলেট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ৫ হাজার ৬৫৭ জন, নর্দান ইলেট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) দুই হাজার ৫২৪ জন, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৫৫৬ জন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দুই হাজার ৫৮২ জন অতিরিক্ত বিলের শিকার হন৷আর ডিপিডিসি তদন্ত করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ চার জনকে সাময়িক বরখাস্ত, ৩৬ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়৷ এছাড়া আরও ১৩ জন মিটার রিডার এবং ডাটা অ্যান্ট্রি অপারেটরসহ মোট ১৪ জনকে চুক্তিভিত্তিক কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়৷ এটা করা হয় ডিপিডিসির আইসিটি বিভাগের পরিচালক এসএম শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তদন্তের ভিত্তিতে৷ কিন্তু তার করা শোকজের জবাবেই উঠে এসেছে আসল তথ্য৷ যারা শোকজ পেয়েছেন তারা জবাবে বলেছেন, ‘‘এসএম শহিদুল ইসলামই তাদের অতিরিক্ত বিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ কোন এলকায় কত ভাগ বেশি বিল করতে হবে তাও বলে দেয়া হয়৷’’ তারা শহীদুল ইসলামের নির্দেশের ই-মেইল এবং তাদের কাছে পাঠানো কোন এলাকায় কত বাড়তি বিল করতে হবে তার নির্দেশনা সংক্রান্ত চার্টও জমা দিয়েছেন৷ তাতে দেখা যায় সর্বোচ্চ ৬৫ ভাগ বিল বেশি করতে বলেছেন তিনি৷ ৮ এপ্রিল এই নির্দেশ দেয়া হয়৷ জানা গেছে বেশি বিদ্যুৎ বিল আদায় করে ‘পারফরমেন্স বোনাস’ নেয়াই ছিলো এর উদ্দেশ্য৷এনিয়ে কথা বলার জন্য বার বার চেষ্টা করেও শহিদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি৷ তবে ডিপিডিসির এমডি বিকাশ দেওয়ান দাবি করেন, ‘‘এরকম কিছু ঘটেনি৷ বাড়তি বিল আদায়ের কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি৷ মিটার দেখে দুই মাসের বিল একসঙ্গে করা হয়েছে৷’’কিন্তু বাড়তি বিল আদায়ের নির্দেশ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট থাকা এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করেছেন জানালে জবাবে তিনি তদন্তের কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এনিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে৷ তারা দেখছেন৷’’ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তাকে ওই সময়ে তার পদের কারণে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছিল৷ এখন নতুন তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷’’তিনি দাবি করেন, ‘‘ডিপিডিসি বাড়তি বিদ্যুৎ বিল আদায়ের কোনো অফিসিয়াল নির্দেশ দেয়নি৷ আর যদি কেউ এটা করে থাকেন সেটা তার ব্যক্তিগত দায়৷ গ্রাহকেরা চাইলে এর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন৷’’এদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খান বলেছেন, ‘‘যারা এটা করেছেন তারা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন৷ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটা নিয়ে সময় কাটিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ বাড়তি বিল আদায়ের যে নির্দেশ দেয়া হয়ছে সেটা সরাসরি দেশের প্রচলিত আইন বিরুদ্ধ কাজ৷ যারা এটা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করে এখনই আইনের আওতায় আনা দরকার৷কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, ‘‘এটা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)৷ কিন্তু তারা দেখছে না৷ তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে৷ যেখানে তাদের কাজ হল দুই পক্ষের শুনানির মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি করা সেটা তারা করেননি৷ তারা শুধু কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা একটি চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে৷’’এদিকে বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে এই ঘটনায় শহিদুল ইসলামসহ পাঁচ জনকে তারা এরইমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে৷ DW শেয়ার বাংলাদেশবিষয়: