জেনে নিন রমজানের কিছু শুদ্ধাচার

প্রকাশিত: ৬:১৯ অপরাহ্ণ , মার্চ ১০, ২০২৪

মাহে রমজান সমাগত। শুধু আত্মিকই নয়, শারীরিক মানসিক ও সামাজিক ফিটনেস বাড়ানোরও মাহেন্দ্রক্ষণ এই মাস। সঠিক নিয়মে এক মাস সাওম সাধনা করলে বাড়বে টোটাল ফিটনেস। তবে বাস্তবতা হলো অশুদ্ধ কিছু কাজের দরুন ব্যর্থ হয় রোজার উদ্দেশ্য। তাহলে রোজার শুদ্ধাচার কী? আসুন জেনে নেয়া যাক রোজার কিছু শুদ্ধাচার।

আগে ঠিক করুন রোজা থেকে আপনি কী চান?
আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের মাস মাহে রমজান। আল্লাহ্‌র রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের মাস এটি। শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির নিয়তে বিধানমাফিক রোজা রাখার মধ্য দিয়ে আপনি নিজেকে একজন নিষ্পাপ মানুষে পরিণত করতে পারেন।

রোজার আত্মিক এই দিকটি ছাড়াও আছে শারীরিক উপকারের দিক। নবীজী (স.) বলেছেন, ‘তোমরা রোজা রাখো যেন সুস্থ থাকতে পারো’। রোজা রাখলে অটোফেজি নামক একটি জৈবিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে দেহকে দূষণমুক্ত করে।

সামাজিক সহমর্মিতা-সমমর্মিতা জাগ্রত করার মাসও রমজান। শুধুমাত্র রোজাদারকে সেহরি বা ইফতার করানোই নয়, তিরমিজী শরীফের একটি হাদীসমতে, রোজা না রাখা ব্যক্তিকে আপ্যায়ন করার মধ্যেও রোজাদারের জন্যে আছে অসামান্য কল্যাণ।

রোজার এই সবগুলো কল্যাণই আপনি হাসিল করতে পারেন যথাযথ নিয়মে রোজা রাখার মাধ্যমে।

রোজা কি শুধু না খেয়ে থাকার নাম?
সারাদিন না খেয়ে থাকা মানে রোজা রাখা নয়। সারাদিন ঘুমিয়ে বা টিভি সিনেমা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থেকে আপনার রোজা রাখাটাই অসার হতে পারে। তাই এগুলো বর্জন করুন; স্মার্টফোন থেকে ডিলিট করুন ফেসবুক ইউটিউব টুইটার স্ন্যাপচ্যাট ইনস্টাগ্রাম নেটফ্লিক্স ইত্যাদি অ্যাপ।

আবার ভরপেট সেহরি-ইফতার করাতেও রোজার মাহাত্ম্য বাড়ে না। রমজানে প্রয়োজন আত্মশুদ্ধির আপ্রাণ চেষ্টা। তাই শুধু খাবারেই নয়, চিন্তা কথা ও আচরণেও সংযমী হোন।

পরচর্চা ও গীবত নিজে করবেন না। অন্যেরা করলেও তাতে অংশ নেবেন না।

ধৈর্য ও সহনশীলতা অনুশীলনের মাস রমজান। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। রোজাদার অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় কথা বিতর্ক ঝগড়া উত্তেজনা চেঁচামেচি ও দুর্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যেরা করলেও প্রশান্ত থাকুন।

আর কেউ আপনার সাথে যেচে এসে বিবাদ করতে চাইলে বিনীতভাবে তাকে বলুন যে আপনি রোজাদার।

আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতে ব্যয় করুন প্রতিটি মুহূর্ত
আরেকটি রমজান মাস পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করুন। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে পরিকল্পিতভাবে এ মাসটিকে কাজে লাগান।রুটিন করুন কীভাবে রমজানের প্রতিটি দিন অতিবাহিত করবেন। এসময় রোজা রাখা ও আনুষঙ্গিক ইবাদতকেই প্রাধান্য দিন।

রমজানকে কেনাকাটাসর্বস্ব করে তুলবেন না। রমজান আসার আগেই ঈদের কেনাকাটা সম্পন্ন করুন।

রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। আর একটি ফরজ ইবাদত ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি নফল ইবাদতে মন দিন।

কোরআন চর্চা আল্লাহ-সচেতনতা বাড়ায়। তাই ফজর নামাজের পরে ও সারাদিনে অন্তত ৩০ মিনিট পড়ুন আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী।

নবীজীর (স) সুন্নত হিসেবে তারাবীহ পড়তে সচেষ্ট হোন।

দিন শুরু করুন দান করে। অসহায়-বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে নিজে দান করার পাশাপাশি অন্যকেও দানে উৎসাহিত করুন।

রমজানে সেহরিতে যা খাবেন, যা খাবেন না পরিমিত ভাত-সবজি অথবা কলা-খেজুর অথবা দই-চিড়া খান;

পর্যাপ্ত পানি পান করুন;
মাছ-গোশত জাতীয় প্রোটিন এবং তেলেভাজা খাবার বর্জন করুন। কারণ প্রোটিন পানির তৃষ্ণা বাড়ায়।
খিচুড়িও পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। তাই সেহরিতে খিচুড়ি না খাওয়াই ভালো। ডাল ও ডিমও যথাসম্ভব এড়িয়ে যান।

রমজানে ইফতারে যা খাবেন, যা খাবেন না
নবীজী (স) ইফতার করতেন তিনটি তাজাপাকা খেজুর, নইলে তিনটি শুকনো খেজুর, কোনটাই না থাকলে শুধু তিন ঢোক পানি দিয়ে। কাজেই নবীজীর (স) সুন্নত অনুসারে খেজুর-পানি দিয়ে ইফতার করুন; মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিন। এসময়ে খেতে পারেন ভাত শাকসবজি মাছ/ গোশত/ ডিম ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার, সালাদ লেবু ছোলা টক দই।

কলা বাঙ্গি আনারস পাকা পেঁপে বা যে-কোনো মৌসুমি ফল আপনার সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারে। ব্লেন্ডারে জুস না করে চিবিয়ে খান এসব ফল। বর্জন করুন পেঁয়াজু চপ বেগুনি পাকোড়া ইত্যাদি ভাজাপোড়া খাবার; মশলাদার গুরুপাক ও অস্বাস্থ্যকর খাবার। এ খাবারগুলো হজমে অসুবিধা করে বুক জ্বালাপোড়া ও এসিডিটির সমস্যাও বাড়ায়।

পোলাও বিরিয়ানি তেহারি মোগলাই হালিম চাইনিজ ফুড গরু ও খাসির গোশত এ মাসে যত কম খান তত ভালো।
চিনির শরবত, প্যাকেটজাত জুস ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার পুরোপুরি বর্জন করুন।
খাদ্য-উৎসব নয়, খাদ্যসংযমের মাস রমজান রমজানে যত খুশি খাও, এ মাসে খাবারের কোনো হিসাব নেই− এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। বর্জন করুন অতিরিক্ত খাবার এবং খাবারের অপচয়।

স্ট্যাটাস বাড়াতে বা ভোজন-উৎসব করতে বিলাসবহুল হোটেল/রেস্তোরাঁ/খাদ্যমেলায় ইফতার/সেহরি পার্টিতে অংশ নেবেন না।

দাওয়াতে গেলেও খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করুন। ইফতারে ভাজাপোড়া তৈলাক্ত ও গুরুপাক খাবার থাকলে এ নিয়ে মন্তব্য করার বা যুক্তি-ব্যাখ্যা দেয়ারও প্রয়োজন নেই। মেজবান জোর করলে বিনয়ের সাথে বলুন এগুলো আপনি এখন খেতে চাচ্ছেন না।

কিছু টিপস
ইফতারের পূর্বের সময়টি দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়। তাই রোজার আগেই ঠিক করে ফেলুন প্রতিদিন ইফতারের আগে বিশেষ কোন দোয়াটি করতে চান। প্রয়োজনে এখনই নোট করে রাখুন।

ইফতারের সময় খেজুর ভালোমতো চিবান। এতে খেজুরের গ্লুকোজ লালার সংস্পর্শে এসে সুক্রোজে পরিণত হয়ে দেহে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাবে। বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ইফতারে নিয়মিত কলা খান। কলায় আছে পটাশিয়াম যা এসিডিটি নির্মূলে কাজ করে।
রাতে ঘুমানোর আগে সম্ভব হলে এক গ্লাস দুধ পান করুন।

সারাদিন শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে ইফতারে দই-চিড়া ও গুড় খেতে পারেন।
অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারেন না গভীর রাতে উঠতে না পারায়। রমজান মাসে কাজটা বেশ সহজ। কিছুটা বাড়তি সময় হাতে রেখে উঠে সেহরির আগেই আপনি কয়েক রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন।

Loading