বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করেন

প্রকাশিত: ৯:০৮ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১১, ২০২৩

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাড়ে তিন বছরের মেয়াদে ১,৬৭,৮৩০ একর খাস জমি বরাদ্দের মাধ্যমে ১,৪৭,৩২৩টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সরকারই ভূমিহীন, দুঃস্থ ও নদীভাঙন কবলিত মানুষদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে দেশে “গুচ্ছ গ্রাম” নির্মাণ করার প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

উদ্যোগের অংশ হিসেবে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় চর ক্লার্ক এলাকায় চারটি গুচ্ছ গ্রাম, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার দিয়ারা বালুয়ায় একটি গুচ্ছ গ্রাম, লক্ষ্মীপুরের উপজেলা রামগতির অন্তর্গত চর পোড়াগাছায় একটি গুচ্ছ গ্রাম এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশে একটি গুচ্ছ গ্রাম তৈরি করা হয়। গুচ্ছগ্রামগুলোতে ১,৪৭০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু দুই কোটি বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। এ জন্য তিনি ১৯৭২ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসব্যাপী পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল ভারত থেকে উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে আনা, গৃহহীন মানুষের জন্য অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা করা এবং কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমোর এবং তাঁতিদেরকে তাদের অর্থনৈতিক জীবনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ভারত থেকে প্রায় এক কোটি শরণার্থী দেশে ফিরে আসে।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলির সহযোগিতায়, বঙ্গবন্ধু সরকার নতুন কোনো কর আরোপ ছাড়াই ৫৫০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে একটি “পুনর্বাসন বাজেট” গ্রহন করেন।
সরকার পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে এবং পরে তা ৪,৪৫৫ কোটি টাকার প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
যুদ্ধোত্তর পুনর্বাসন কর্মসূচির অধীনে, ১.৪১ লক্ষ মণ খাদ্যশস্য বিতরণ, নয় লক্ষ বাড়ি পুনর্গঠন এবং ভূমিহীন, দুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ৯ হাজার প্লট বিতরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধকালে প্রায় ১০ কোটি টাকার সরকারি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রাইভেট সেক্টরের বাড়িঘরের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৮২৫ কোটি টাকা।

আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য পুননির্মাণের কাজ ১০টি খাতে ভাগ করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়।
খাতগুলোর মধ্যে ছিল ইমারত অধিদপ্তর, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পূর্ত অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, পর্যটন কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ রাইফেলস জরিপ বিভাগ।
বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে “ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি” বাস্তবায়নে অর্থের ব্যবস্থা করা হয়। এ লক্ষ্যে, স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ২০,৪৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং ১০০ টিরও বেশি বহুতল আশ্রয় কেন্দ্র এবং ১৫ মিটার উঁচুতে ১৩৭টি “মাটির কেল্লা” নির্মিত হয়েছিল।

মাটির তৈরি এসব কেল্লায় মানুষের পাশাপাশি পশুপালের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয় স্থানীয়ভাবে এগুলো ‘মুজিব কেল্লা’ নামে পরিচিত।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলার পোড়াগাছায় একটি মুজিব কেল্লা উদ্বোধন করেন এবং তৎকালীন নোয়াখালী জেলার প্রশাসনকে নদীভাঙন কবলিত, দুস্থ গৃহহীন মানুষদের সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসনের জন্য নির্দেশ দেন।

বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষদেরকে বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হল দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের জীবিকা উন্নয়ন করা।
১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্প ও অন্যান্য কর্মসূচির আওতায় মোট ৮২,৯৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে এখন পর্যন্ত ৫,৫৫,৬১৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং তাদেরকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা দিয়ে দুই শতাংশ জমির মালিকানা সহ আধা-পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় মোট ২,৭৩,৯৯০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১,৪৮,০৩৫ (আনুমানিক পাঁচজনের একটি পরিবার)।

এটি বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত কারণ বিশ্বে এমন কোনও প্রোগ্রাম নেই যাতে ভূমিহীনদের বিনামূল্যে বাড়ি ও জমি দেওয়া হচ্ছে। শুধু বাড়ি-জমি নয়, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।
গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও ১২টি জেলা এবং ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করেন।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ দফায় ২১টি জেলা ও ৩৩৪টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়েছে।
ওইদিন সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের জন্য দেশব্যাপী বাড়ি বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হল নিশ্চিত করা যে, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। অনেক বিত্তবান ব্যক্তি এ প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে এগিয়ে আসতে পারে যাতে সমাজে কেউ অবহেলিত না থাকে।”

তিনি আরো বলেন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের এ প্রয়াস দেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মা খুশি হবে যার জন্য তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন।
প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, সরকার উন্নত জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে জীবিকা নিশ্চিত করতে আশ্রয়ণ-প্রকল্পের আওতায় হিজড়া, বেদে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, কুষ্ঠরোগী, বস্তিবাসী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনও করেছে।

Loading