শর্মিলী আহমেদ ও আলম খানের মৃত্যুতে তথ্যমন্ত্রীর শোক

প্রকাশিত: ৪:১৪ অপরাহ্ণ , জুলাই ৮, ২০২২

বরেণ্য অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ (৭৫) এবং গুণী সংগীত পরিচালক ও সুরকার আলম খানের (৭৮) মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

শুক্রবার (৮ জুলাই) সকালে মারা যান এ দুই গুণী ব্যক্তিত্ব। তাদের মৃত্যুর সংবাদে শোকাহত মন্ত্রী প্রয়াতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ড. হাছান তার শোকবার্তায় বলেন, মঞ্চ ও টেলিভিশনের চারশতাধিক নাটক এবং দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রের গুণী অভিনয়শিল্পী শর্মিলী আহমেদ এবং ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘চাঁদের সাথে দেব না’, সহ অসংখ্যা জনপ্রিয় গানের সুরকার আলম খান তাদের কীর্তির মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে এ দেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

এদিকে ইয়ুথ বাংলার সভাপতি ও শর্মিলী আহমেদের ঘনিষ্ঠজন মোনা চৌধুরী জানান, সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এ বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। তাকে দ্রুত একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। শর্মিলী আহমদ অনেকদিন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

বনানীতে স্বামীর কবরে শর্মিলী আহমেদকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তার বোন ওয়াহিদা মল্লিক জলি। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া এ জনপ্রিয় অভিনেত্রী অভিনয় শুরু করেন মাত্র চার বছর বয়স থেকে। এখন পর্যন্ত প্রায় চারশ নাটক ও দেড়শ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় জীবনে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সবার মন জয় করেছেন সাবলীল অভিনয় দিয়ে।

১৯৬৪ সালে তিনি তার অভিনয় পেশা শুরু করেন। বেতারের মাধ্যমেই ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটেছিল তার। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘দম্পতি’-তে অভিনয় করেন। ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ মহসিন পরিচালিত ‘আগুন’ সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি।

এ ছাড়া বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান মারা যান বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে। খবরটি নিশ্চিত করেন তার ছেলে সংগীত পরিচালক আরমান খান।

তিনি জানান, ‘আব্বা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আজ বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে।’

বাংলা সিনেমার গানে অবিস্মরণীয় নাম আলম খান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন। আলম খানের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন তিনি। এই স্কুলে থাকা অবস্থায়ই গানের প্রতি আগ্রহী হন এবং মায়ের উৎসাহে তিনি গানের চর্চা শুরু করেন। এরপর বাবাও সমর্থন দেন। তার ছোট ভাই ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পপ শিল্পী আজম খান।

গানের ভুবনে আলম খানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তিনি ‘তালাশ’ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেন।

সাত বছর সহকারী হিসেবে কাজের পর ১৯৭০ সালে আলম খান একক সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে সাফল্য পেতে অনেকটা দেরি হয় তার। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সারেং বৌ’ সিনেমার জন্য তিনি তৈরি করেন ‘ও রে নীল দরিয়া’ গানটি। দেশজুড়ে এটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এখনো সমান জনপ্রিয় গানটি।

এরপর আলম খান আরও বহু কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী’, ‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘বেলি ফুলের মালা পরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভাল’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’, ‘তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটাইরে’ ইত্যাদি।

আলম খান তার ক্যারিয়ারে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচবার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে এবং একবার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে। – সময় সংবাদ

Loading