বেহাল দশা থেকে সাফল্যের চুড়ায় পার্বতীপুর উত্তর পশ্চিম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার

মনজুরুল হক মঞ্জু মনজুরুল হক মঞ্জু

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৮:৪৭ অপরাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ৫০ একর জমি ওপর উত্তর পশ্চিম মৎস্য সম্প্রসারণ ও বীজ উৎপাদন খামারটি। ১৯৬৪ স্থাপিত হলেও দীর্ঘদিনের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনায় খামারটি এতোদিন আলোর মুখ দেখেনি। আজ খামারটি দেশের একমাত্র আদর্শ খামারে পরিণত হতে চলেছে। খামার ব্যবস্থাপক মোঃ মুসা কালিমুল্লা তার সৃজনশীল মেধা ও কর্মদক্ষতায় মৃত প্রায় খামারটিকে উৎপাদন মুখী খামারে পরিনত করতে সক্ষম হয়েছেন। ইতিমধ্যে রংপুর বিভাগে পরপর ৫ বার সফল খামার ব্যবস্থাপক হয়েছেন পার্বতীপুর উত্তর পশ্চিম মৎস্য সম্প্রসারণ ও বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যবস্থাপক মোঃ মুসা কালিমুল্লা।
এ মৎস্য খামারে রয়েছে মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য ৪৬টি পুকুর, প্রশিক্ষন কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবন। এখানে কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, সিলভার, বিগ হেড, গ্রাসকার্প, কালী বাউস, বাটা ও দেশীয় প্রজাতি সিং, মাগুর, কই, গুলসা টেংরা ও পাবদার পোনা উৎপাদন হচ্ছে। রংপুর জেলার ৫৮ উপজেলা, কুড়িগ্রাম ও রংপুর সদরের শুঠিবাড়ী ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। পার্বতীপুরের মত তারাও চিংড়ি চাষ করে চাষিদের মাঝে পোনা বিতরন করছে। এই প্রথম জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে পার্বতীপুর উত্তর পশ্চিম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে জেলার ১১টি উপজেলায় প্রায় ৫ মেট্রিক টন পোনা সরবরাহ করা হয়। এসেছে গলদা চিংড়ির উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য। এই গলদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। ২০০০ সালের ২৭ অক্টোবর তৎকালীন মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব এ প্রকল্প কমপ্লেক্সে গলদা হ্যাচারী উদ্বোধন করেন।
পার্বতীপুর উত্তর পশ্চিম মৎস্য সম্প্রসারণ ও বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক মোঃ মুসা কালিমুল্লা বলেন- খামারটি দেশের মধ্যে আদর্শ খামারে পরিণত করা সম্ভব। এ খামারে গলদা চিংড়ি নয় যেন সাদা সোনা উৎপাদন হচ্ছে। এখানে দেশীয় প্রজাতির শিং, মাগুর, কই, গুলসা টেংরা, পাবদা ও রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বিগ হেড, গ্রাসকার্প, কালীবাউস, বাটা জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এক সময় ধারনা করা হয়েছিল, এ অঞ্চলের মাটি ও পানি চিংড়ি চাষের উপযুক্ত নয়। কিন্তু খামারে সফল গলদা চিংড়ি বীজ উৎপাদন এ অঞ্চলে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনাকে অনেক খানি বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২১ সালের জুন কর্ম পরিকল্পনায় এই খামারে ৪.৫০ লক্ষটি গলদা চিংড়ি পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। গলদা চিংড়ির পিএল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জীবন চক্রের শুরুতে ব্রাইন ওয়াটার বা লোনা পানির দরকার হয়। এক্ষেত্রে কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে ব্রাইন ওয়াটার বা লোনা পানি সংগ্রহ করে স্বাদু পানি বা মিঠা পানির সাথে খাপ খাওয়ায়ে পিএল উৎপাদন করা হয়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে বরগুনার আমতলীর পায়রা নদী থেকে গলদা চিংড়ির মা মাছ (বড় মাছ) সংগ্রহ করে আনা হয়। মা মাছ থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে ২৮-৩৫ দিনের মধ্যে পি এল উৎপাদন করা হয়।
আজ বুধবার মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পার্বতীপুর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ভঙ্গুর অবস্থা আর নেই। এক সময় অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় খামারটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে, এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। খামারের বর্তমান সাফল্যের পিছনে প্রশিক্ষন কর্মকর্তা মাহবুবার রহমান, হ্যাচারী কর্মকর্তা মাহফুজুল হক, সম্প্রসারন কর্মকর্তা প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও সহকারী হ্যাচারী কর্মকর্তা আমিনুল সরকারের অবদান ও ভুমিকা কোন অংশে কম নয় বলে উল্লেখ করেন-খামার ব্যবস্থাপক মোঃ মুসা কালিমুল্লা।
পার্বতীপুর উত্তর পশ্চিম মৎস্য সম্প্রসারণ ও বীজ উৎপাদন খামারের বর্তমান সাফল্য নিয়ে দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মুক্তাদির খান বলেন, এ অঞ্চলে দেশীয় মাছগুলো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এমন মর্হুতে এ খামারে দেশীয় প্রজাতির শিং, মাগুর, কই, টেংরা, পাবদা ও রুই, কাতলাসহ কার্প জাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। সেগুলো চাষী পর্যায়ে চাষ করতে বিভিন্ন কর্মশালাও করা হচ্ছে। এছাড়া এ খামারে গলদা চিংড়ির পিএল উৎপাদন করা হয়। কাগজে-কলমে যে লোকবল থাকার কথা তা এখানে নেই। তারপরও স্বল্প লোকবল নিয়ে খামারের সকল কাজ সুচারুভাবে করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এ খামারের ব্যবস্থাপক। তার কর্মদক্ষতায় সন্তষ্ট হয়ে রংপুর মৎস্য বিভাগ তাকে ৫ বার সফল খামার ব্যবস্থাপক ঘোষনা করেছেন।
রংপুর বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাইনার আলম জানান, এ খামার মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। অব্যস্থাপনায় খামারটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে, এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কারন সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি দলবদ্ধভাবে কাজ করছেন। গলদা চিংড়ির উৎপাদনে আমরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। বর্তমানে এ খামারটি থেকে প্রায় ১ হাজার ২শ’ মাছ চাষী পোনা নিয়ে চাষ করছেন। সেগুলো চাষী পর্যায়ে গলাদা চিংড়ি ও দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করতে বিভিন্ন কর্মশালাও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পার্বতীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোঃ হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক বলেন-দীর্ঘদিনের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনায় খামারটি বেহাল দশায় পতিত হয়েছিল। তবে, বর্তমানে দায়িত্বরত খামার ব্যবস্থাপক মোঃ মুসা কালিমুল্লা খামারটিকে সফল ও উৎপাদন মুখী খামারে পরিনত করতে সক্ষম হয়েছেন। পূর্বের অবস্থার চেয়ে খামারের আমুল পরিবর্তন ঘটেছে।

 

Loading