তালতলীর বিএডিসি ম্যানেজারের খামখেয়ালিতে পানি পাচ্ছেনা চাষিরা

প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ , মার্চ ৮, ২০২৪

সাইফুল্লাহ নাসির,আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ

বরগুনার তালতলীতে তরমুজ ক্ষেতে পানি সেচ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েছে শতাধিক কৃষক। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে কয়েক কোটি টাকা। এ বিষয়ে থানা ও ইউএনও অফিসে অভিযোগ দিলেও তোয়াক্কা করছেন না বিএডিসি ম্যানেজার ফারুক মোল্লা।

জানা যায়, উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া এলাকায় গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সমিতির মাধ্যমে সেচ প্রকল্প চালু করা হয়।

সেখানে স্থানীয় ফারুক মোল্লাকে ঐ সমিতির ম্যানেজার করা হলে।সেচ প্রকল্প শুরু নিজের বলে দাবি করেন তিনি । এই সেচ প্রকল্পের অধিনে ২০ হেক্টর জমি রয়েছে। তবে ফারুক মোল্লার সাথে কৃষকের সঙ্গে দ্বন্দের জেরে কৃষকদের পানি দিচ্ছেন না।যার ফলে কাঙ্খিত ফসল পাচ্ছেন না কৃষকরা কারণ প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বোরো, আমন ও তরমুজ চাষীরা । ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও তারা সমাধান পাচ্ছে না জানায় স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় কৃষকরা থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হলে পুলিশের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। পরে উপায় না পেয়ে কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসাররের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক মোল্লাকে শুনানীর জন্য নোটিশ করেন ইউএনও।

গত ৩রা মার্চ শুনানীর তারিখ থাকলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে না আসার কথা জানিয়ে দেন। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ফারুক মোল্লা কে ইএনও অফিসে নিয়ে আসলে। ৪ঠা মার্চ ইউএনও অফিসে শুনানি হয় সেখানে ফারুক মোল্লা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ ফরাজীর মাধ্যমে তরমুজ চাষের জন্য কৃষকদের সেচের পানি দিবেন বলে অঙ্গীকার করেন । তবে পরের দিনই কৃষকদের পানি না দিয়ে উল্টো কৃষকদের হুমকি দিতে থাকেন।

স্থাণীয় তরমুজ চাষি নজরুল বলেন,বিগত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষের সেচ এর অভাবে কষ্টে আছি। সাবেক ইউএনও কাওসার সাহেব, এস.এম সাদিক তানভীর স্যার বারবার আমাদের পানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং প্রতিবছর অস্থায়ী ভাবে সমাধান হয়েছে। নতুন ইউএনও আসলেই নতুন ভাবে ঝামেলা করেন ফারুক মোল্লা। সাবেক এক সচিব এর প্রভাব দেখিয়ে তিনি আমাদের সেচ পানি দিচ্ছি না। আরেক কৃষক কালাম বলেন, আমি পানি না পেলে কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবো। বর্তমান ইউএনও স্যারের কাছে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। তিনিও বারবার উদ্যোগ নিয়েও তাদের খামখেয়ালি পানার জন্য কিছু করতে পারছেনা। উল্টো বর্তমান ইউ এন ও স্যার ন্যায়ের পক্ষে কথা বলায় তাকে নিয়ে প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে ফারুক মোল্লার সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি প্রতিবেদক এড়িয়ে যান।

বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মোসাদ্দেক জানান, সেচ প্রকল্পের দেওয়া হয়েছে জমিতে পানি সরবারহ করার জন্য। স্থানীয় বিরোধ নিয়ে ওই সেচের ম্যানেজার জমিতে সঠিক ভাবে পানি দিচ্ছে না বলে অনেক অভিযোগ আছে আমাদের কাছে। গত তিন চার বছর ধরে এমন অভিযোগ আসতেছে বলে জানতে পেরেছি। এগুলো অস্থায়ীভাবে সমাধানও হয়েছে। তবুও তিনি প্রতিবছর কৃষকদের সঠিকভাবে পানি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাচ্ছি। এ বিষয় নিয়ে ওই ফারুক মোল্লার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি যদি পানি না দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, কবিরাজপাড়া এলাকার বিএডিসি সেচের পানি কৃষকদের না দেওয়ার একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। সেজন্য শুনানি করেছি। সেখানে ফারুক মোল্লা কৃষকদের পানি দিবেন মর্মে স্বীকার করেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কৃষকদের পানি দিচ্ছে না। বিগত কয়েক বছর যাবত সেচ পানি নিয়ে তার বিরুদ্ধে অত্র কার্যালয়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তখন তাৎক্ষণিক পানি সেচের ব্যবস্থা করা হলেও প্রতিবছরই একই ঝামেলা সৃষ্টি করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থায়ী সমাধেন ব্যবস্থা করা হবে।

তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জানান, বিষয়টি নিয়ে সামনের মাসিক সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে এমন কাজ করতে দেওয়া হবে না।

Loading