হারানো সুর ( ০৪ ) কুলফি মালাই – ইন্দু বিভা নিউজ ৭১ অনলাইন নিউজ ৭১ অনলাইন প্রকাশিত: ৯:১২ অপরাহ্ণ , মে ১৫, ২০২৩ শিউলি”কে গল্প শোনাতে বসেই তিতলি যেন বিস্মৃতির অতলে অবগাহন করে রত্ন পাথর খুঁজে পেলো—- শেষ বিকেলের দিকে পাকড়াও হলো টেঁপি। রাত আটটা নাগাদ সন্দীপনের বুদ্ধি ও কুটকৌশলে মুক্তি মিললো টেঁপির। টেঁপির অপরাধ কি? ওকে কয়েদখানায় কতোদিন সাজা ভুগতে হয়েছে? আরে! বলছি তো। অধৈর্য হলে কী গল্প শোনা যায়? শিউলির আবদার আর প্রশ্নের শেষ নেই। আগে বলো না মা,কি করেছিল বেচারা টেঁপি? ওর বয়স কতো মা? সবে নয় বছরে পা দিয়েছে। আহারে — শিশু অপরাধ? মা শিশুদের শাস্তি ও নির্যাতন তো আইনত অপরাধ। মা ও মা, খুব কষ্ট লাগছে। বলো তো শিগগির। শোন- চারপাশে চৈত্রের ঝলসানো রোদ খাঁ খাঁ করছে। সূর্য টা”র গায়ে দুপুরের সুখ। গাছপালার সাথে ক্লান্তিতে পাল্লা দিয়ে বাড়ির বৌ ঝিয়েরাও ভাতঘুমে ব্যস্ত। টেঁপির মা, টেঁপিকে বুকের মধ্যে নিয়ে পরম আয়াশে ঘুমাচ্ছে আর মাঝে মাঝে নাকও ডাকছে। নিঝঝুম দুপুর। কোথাও একটা কুকুর বিড়ালও জেগে নেই। আরামের ঘুমে অচেতন পুরো পাঁড়া। কিন্তু পঞ্চপাণ্ডবদের তো ঘুমালে চলবে না। কতোশতো কাজ ওদের। টেঁপি ও টেঁপি,শুনতে পাচ্ছিস? হঠাৎ ফিস ফিসে আওয়াজ– খিড়কি খুলে বেরিয়ে আয় টেঁপি। সেই কখন থেকে অপেক্ষায় আছি! কী জ্বালা রে বাবা। তুলি “বাংলা ঘরের” জানালায় গ্রীলের সাথে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করেই যাচ্ছে।টেঁপি এ্যাই টেঁপি,আয় বলছি। আহা —- মনে পড়ে সেই জৈষ্ঠ্যের দুপুরে পাঠাশালা পলায়ন! তর সইলো না টেঁপির।এমন আদর মাখানো মিষ্টি সুখের ফিসফিসানি—- যেন মধুতে মাখা।মায়ের শাসন ও নাক ডাকাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কষ্টের পাহাড়া ডিঙিয়ে খিড়কি খুলেই —-পগার পাড় সারাটা দুপুর তাইরে নাইরে না করে বেড়ানো—– দয়ালদে”র গাছের কাঁচা আম,বেলাদি”র মায়ের রোদে শুকানো জাল প্যাঁচানো আমসত্ত্ব! জিভে জল এসে পড়লো শিউলির। শুনছিস শিউলি— হুম মা – তারপর কি হলো? উত্তম মধ্যমের পরোয়া না করে পঞ্চপাণ্ডব বেরিয়ে পড়লো কুরুক্ষেত্র জয় করতে। শীলু দলনেতা, তুলি,লিপি,মুন্নী ও টেঁপি। খিড়কির দুয়ার খোলার সময় খাটের পাশে ছোট্ট টি টেবিলের ওপর পড়ে থাকা দশ পাই আর পাঁচ পাই দুটো টুক করে তুলে নিতে ভুল হয়নি টেঁপির। তুলি আর শীলু বললো, টেঁপি এতো দেরী করে এলি কেন? কত সময় নষ্ট হলো তোর জন্য। গুনগুনিয়ে গান শুরু করলো লিপি— আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে-! সময় নষ্ট করার জরিমানা দে টেঁপি। গদগদ গলায় তুলির গলা জড়িয়ে টেঁপি মুচকি হেসে বললো— আজ তোদের স্পেশাল একটা জিনিস খাওয়াবো—– শীলু ওর টোকর থেকে গুড়ো দুধ আর চিনি মেশানো পুটলিটা বের করেই বললো চল এখনই সাবাড় করি।টেঁপি বললো, এখন না। চল রাজুদের বরফ কলে। যে গরম পড়ছে! বলেছি না স্পেশাল কিছু একটা হবে তোদের জন্য। ওই পর্ব শেষ করে যাবো দয়াল দে”র আম বাগানের দিকে—– এক একটা আম আধপাকা হয়ে আছে—- কয়েকটা আম পেড়ে, কাঁচা মরিচ,সর্ষের তেল, দুধ আর চিনি মাখিয়ে ভর্তা—- ওটা হবে শরীফদে”র ছাদে। চল চল— এখন বরফ কলে যাই—– কুরুযুদ্ধে পঞ্চপাণ্ডবের যুূূূদ্ধ কৌশল শুরু। দুঃসাহসী যুদ্ধ জয়ের সফল উত্তেজনায় চৌধুরীদের উঠোন মাড়িয়ে ওরা বরফ কলে এসে উপস্থিত হলো। ওদের আনন্দে গুড়ে বালি মেশাতে কৌরব সেনা রাহাত হাজির।রাহাত এসেই প্যানপ্যানানি শুরু করে দিল। কে কী কী চুরি করেছিস এক্ষুনি বল। না হয় আমি গিয়ে শীলুর মা”কে ডেকে আনবো। শোন টেঁপি—– মাসীমা”কে ও ডাকতে গেলাম। তুলি মুখ কাচুমাচু করে বললো লক্ষ্মী ভাই আমার,রাহাত তোকে নারকেলের আইসক্রিমের ভাগ দিবো।একদম পাক্কা। প্রতিটা নারকেলের আইসক্রিম পাঁচ পয়সা। পাঁচটার দাম পড়বে পঁচিশ পয়সা—– দুধ মালাই আর ধবধবে সাদা নারকেলের কুচির কুলফি —- আহ্ কী লোভনীয়!! বরফ কলের মিজান ভাইয়ের সাথে কতো ধানাই পানাই। উদ্দেশ্য একটাই—– দাম কমিয়ে পনেরো পয়সায় পাঁচটা কুলফি আইসক্রিম। তিনটার দাম দিয়ে বাকিটা কাল দেবে বলে মিজান ভাইয়ের মন গলালো। কানুদের পোড়া দালানের দেয়াল ঘেঁষে দুধের গুঁড়ো আর চিনির মিশ্রণ সহ কুলফি দুপুরের মজাটাই যেন পৃথিবীর সেরা প্রাপ্তি! উফ্ চেটে চুষে দাঁতের নিচে নারকেল কুচি বেশিক্ষণ ধরে চিবিয়ে খাওয়ার আনন্দ! যেন অমৃত ভোগের আসর। উদাসী দুপুর, ঘুমন্ত মা”আর কুলফি”র মজা। পঞ্চপাণ্ডবের আনন্দের আতিশয্যে বিকেলের সৌন্দর্য যেন সহস্র গুন বেড়ে গেলো। ছেলেবেলার সোনাঝরা বিকাল, তেজ পড়ে যাওয়া রোদ কুলফি মালাইয়ের সাথে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিতেই —– আচমকা টেঁপির চুলের বেণীতে দূর্ধর্ষ র্হেঁচকা টান। আহা পাঁচটা কুলফির সম্মান আর নারকেল কুচি তখন ধূলায় গড়াচ্ছে। দুধের গুড়ো গলায় আটকে তুলির তখন মরণদশা। শীলু ভেউ ভেউ করে পরাজয় ও স্বীকারোক্তির পর্ব নিয়ে ব্যস্ত। পঞ্চপাণ্ডব তখন পঞ্চভূতের ফাঁদে। ডানপিটে হাড়বজ্জাত বাঁদরের দল। দাঁড়া আজ তোদের পুলিশের গাড়িতে তুলে দিবো। তোদের মায়েরা সব নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। টেঁপি আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। কতো পয়সা চুরি করেছিস বালিশের নিচ থেকে বল-। উফ্ দুম করে পাঁচ সের ওজনের ভাদ্রমাসের চালতা টেঁপির পিঠে। সারা পাড়ায় আর ছেলেমেয়ে নেই?গুন্ডী,ডাকাত কতোগুলা! রক্তচক্ষু বিস্ফারিত রাগে গজগজ করতে করতে আসামী টেঁপির কাছে জননী জগদম্ভার জেরার পর্ব।সাথে চলছে কুলফি মাড়াইয়ের বিপরীত খাবার উত্তম মধ্যম! আহা সোনাঝরা বিকাল! কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে টেঁপির কষ্টে। মা”কে ঘুমে রেখে, পয়সা চুরি করে, দস্যু বন্ধুদের নিয়ে সারা পাড়া মাথায় তুলেছিস্। এক্ষুনি বের কর সব পয়সা।চুরির পয়সা দিয়ে কত কুলফি খেতে ইচ্ছে করে দেখি? চরম উত্তেজিত মা জগদম্ভার ছোট বড় মাঝারী কিল চড় খেয়ে টেঁপি স্তব্ধ প্রায়-। কিছুক্ষণ সম্বিৎ ছিল না বললেই চলে। যখন সম্বিৎ ফিরে এলো তখন টেঁপি নিজেকে আবিষ্কার করলো ঘন অন্ধকারের মধ্যে।মশার কামড় আর ভ্যাপসা গরম জীবন প্রায় যায় যায়। ওমা সে কী! আধশোয়া অবস্থা থেকে প্রচণ্ড ব্যথায় কোঁকাতে কোঁকাতে উঠে দাঁড়ালো। এদিক ওদিক তেলাপোকা।অন্ধকারে বুঝলো ও এখন ভাঁড়ার ঘরে। দরজায় কয়েকটা ঘা দিয়েই তারস্বরে ভেউ ভেউ চিৎকার আর কান্না— আর কক্ষণো তোমায় না বলে পয়সা চুরি করবো না, কুলফি মালাই খাবো না।মা, মা গো এবারকার মতো ক্ষমা করে দাও– রাত নয়টার পর টেঁপির বড়দা”র উদ্যোগে জেলখানা থেকে মুক্ত হলো দুর্ধর্ষ অভিযানের নায়ক টেঁপি। বুঝলি মা? এবার শিউলির প্রশ্নপর্ব- আচ্ছা মা,গল্পের টেঁপি এখন কোথায়? শিউলির আড়ালে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলো তিতলি, (টেঁপি) তার শতসহস্র স্নেহধারা ও আদরের অমৃত সাগর,স্বর্গবাসী মা- জগদম্ভার জন্য। চুপ্ দুষ্ট! গল্পের শুরুতেই কিন্ত বলেছি। কোন প্রশ্ন করা যাবে না। ০৩/০৫/২০২০ শেয়ার শিল্প-সাহিত্য বিষয়: