মা ” দিবসের গল্প – এ কেমন মা! নিউজ ৭১ অনলাইন নিউজ ৭১ অনলাইন প্রকাশিত: ১০:৩৫ অপরাহ্ণ , মে ১১, ২০২৩ বিভা ইন্দু চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার! কাক ডাকতে বেশ খানিকটা সময় বাকি।বাড়ির সবাই ভোররাতের নির্ঝঞ্ঝাট ঘুমে বিভোর। এ-ই সুযোগটা কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবেনা।পুবের আলো ফুটলে সাড়ে সর্বনাশ হবে।একগাদা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আসল কাজটাই পণ্ড হবে।তারচে বরং কাজে হাত দেয়া যাক। চোখের সামনে ভেসে ওঠে পোয়াতি মেয়েটার চেহারা।হাড় কঙ্কাল দেহ,গালের চোয়াল গুলো দূর থেকে মা”শব্দটাকে উপহাস করছে।চোখজোড়া গর্তের মধ্যে ঢুকে দুঃখ যন্ত্রণার রাজসাক্ষী, মাথার চুলে চিরুনি পড়লেও তেল পড়েনি কয়েক যুগ!সাজুটা বাঁচবে তো! এতো অনাদর আর অবহেলা জন্মদায়িনী মা” হয়েও মেনে নিতে হচ্ছে। রাহেলা চৌধুরী, সাজুর মা।এক আধটু ফোন করলেই সাজুকে একরাজ্য কথা শোনায়। দজ্জাল শ্বাশুড়ি আর মাতাল স্বামীর নির্যাতন! শেষ পর্যন্ত কী যে আছে সাজুর কপালে। রাহেলার স্বামী রাহেলা’কে বোঝায়, বলে এসব বিষয়ে ধৈর্য ধরতে হয়। মেয়ের কোলে যখন ফুটফুটে সন্তান দেখবে তখন ওদের মনে অনেক পরিবর্তন আসবে। সাজু”কে ওরা ঠিকই আপন করে নেবে। কিন্তু রাহেলা”র ভয়,কাটে না। সেই আতংকে রাহেলা কারো কাছে মুখ খোলে না। মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে কোন প্রতিবাদ করেনা। আল্লাহর কাছে হাত তুলে মুনাজাত ধরে—- সাজু” যেন ঘরে বরে সুখি হয়ে ওঠে। সন্তান সম্ভবা জেনেও জুয়ারী নেজাম বিন্দুমাত্র যত্ন করেনা সাজুর। সাজু”র বর নেজাম ” মায়ের একমাত্র সন্তান। আজগর আলীর ছেলে নেজাম বিশাল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক। সন্তানসম্ভবা মেয়ে সাজুর চিন্তায় গর্ভধারিণী মা কলতলায় গিয়ে তড়িঘড়ি করে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিয়ে নেয়। শখ করে কবুতর পোষেন প্রায় দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে।জবাফুল গাছের ঝোপের ধারেই কবুতরের খোপ। নরপারই মিলে চল্লিশটিরও বেশি কবুতরের যত্ন আত্তিতে কোন আলস্য নেই সাজুর মায়ের! গম,ডাল যখন যা দরকার রাহেলা কবুতরগুলোকে খেতে দেয়। খোপের ভেতর থেকে চার জোড়া কবুতর একটা ব্যাগের ভেতর নিলো,গরুর দুধ,আপেল,আঙ্গুর অন্য একটা ব্যাগে নিয়ে নিঃশব্দে রওনা দেয় সাতরাস্তার মোড়ে! পুবের আকাশ রাঙা হয়ে এলো।অল্প কয়েকটা রিকশা টুংটাং বেল বাজিয়ে ধীর গতিতে যাত্রী খোঁজায় ব্যস্ত। সাজুর মায়ের কোনদিকে চোখ দেয়ার সময় নেই এখন। হাত ইশারায় একখানা রিকশা ডেকে উঠে পড়লো। ড্রাইভারকে বললো আপ-ডাউন। ভাড়ার জন্য চিন্তা যেন চিন্তা না করে।আশ্বাস দিয়ে রিকশাওয়ালাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো সাজুর শ্বশুর বাড়ির ঠিকানায়। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই রাত হয়ে। শ্বশুড় বাড়ির ফটক পার হতেই সাজার শ্বাশুড়ি দাঁড়ানো। ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললে আপা এগুলো আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম।সাজুর তো এখন একটু ভালোমন্দ খাওয়া উচিত। নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো সাজুর শ্বাশুড়ি। আমরা কী হাড় হাভাতের জাত! কেন এনেছেন এসব! না জানি কোন মতলবে এসব এনেছে! তারস্বরে চিৎকার শুনেই সাজুর মা রাহেলা চৌধুরী ব্যাগটা জোর করে গছিয়ে রিকশায় উঠতে গেলো। অমনি পেছন থেকে সাতরাজ্যের কান্না জড়ানো ভয়ার্ত ডাক—- মা,মা গো— এরপরও রাহেলা একটু সময়ও দেরি না করে ফিরতি রিকশায় উঠে পড়লো।কারণ বাড়ির অন্য লোকজন জাগবার আগেই ও’কে বাড়ি পৌঁছাতে হবে। তিনদিন পরে দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায়।সাজু, সাত মাসের পোয়াতি, আগামী সম্ভাবনাকে পেটে নিয়ে আজ আসামীর কাঠগড়ায়! অভিযোগ চুড়ান্ত। এক মঘা বৈদ্য ডাকানো হলো।মঘা বৈদ্য ঝাঁড় ফুক, তুকতাক করে বললো,চাচী আম্মা এসব কবুতর কী বাজার থেকে কেনা! খবরদার। এসব কবুতরের পায়ে যে সুতলি বাঁধা আছে তা হলো শত্রুবিনাশের। এগুলো ঘরেও ঢোকাবেন না। সাজুর মা,রাহেলা চৌধুরী, কবুতরের পায়ে তাবিজ বেঁধে নেজাম”কে নির্বংশে ধ্বংস করবার ষড়যন্ত্র এঁটেছে। চিৎকার, চেঁচামেচি, পাড়া মাতিয়ে সবাইকে জানান দেয়ার চেষ্টা মিসেস আসগর আলীর। কী ধড়িবাজ!কী ফন্দিবাজ নেজামের শ্বাশুড়ি! আমার ছেলেরে জানে মারবার জন্য শেষ পর্যন্ত এ-ই ষড়যন্ত্র! সাজু হুড়মুড় করে শ্বাশুড়ির পায়ে এসে পড়লো। বিশ্বাস করেন আম্মা—- কী! আবার তর্ক করতে শুরু করলি? ঠগবাজ তোর মা,তোর চৌদ্দ গুষ্টি, আমার সাথে চালাকি! সেদিন হাতে নাতে ধরা পড়বার ভয়ে পালিয়ে গেলো কেন তোর মা! ভয়,ঘৃণা,অপমান,লজ্জায় সাজু এসে স্বামী নেজামের পায়ে এসে পড়লো। শ্বাশুড়ি বাজখাঁই গলা সপ্তমে চড়িয়ে বললো—- খবরদার নেজাম তুই যদি এমন জঘন্য জালিয়াতির বিচার না করিস তাহলে, সাজু এবার আবার শ্বাশুড়ির পায়ে লুটিয়ে পড়লো— সাজুর মায়ের কবুতরের পায়ে বেঁধে তাবিজের বিষয়টি আজগর আলীর ছেলের ভীষণ সম্মানহানি ঘটালো। অনেক সহ্য করেছে সাজুকে।চুপ করে থাকার বিষয় এটা নয়। পোয়াতি সাজুর চুলের মুঠি ধরে হির হির করে টেনে নিয়ে গেলো মঘা বৈদ্যের কাছে। কেরামত ভাই, দেখান ওরে— কীভাবে আমাদের শেষ করবার ষড়যন্ত্র করছে ওর মা’। সারা শরীরের ওপর ঝড় বয়ে গেলো সাজুর! হুঁশ, আসে আবার চলে যায়। ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।শাড়ির আঁচল ছিড়ে তচনচ। মাথার চুলে জট।হাঁটুর নিচে শাড়ির দিকটা ভেসে যাচ্ছে রক্তে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা সারা শরীরে।মাথা ঘুরছে।বমি বমি লাগছে। কোঁকাতে কোঁকাতে আল্লাহর নাম জপতে জপতে উঠে দাঁড়ায়। ওর শোবার ঘরে ঢুকতে চায়। খবরদার,খবরদার আর যদি আমার ঘরে ঢুকছিস! বের হয়ে যা বলছি। তোর আহ্লাদ এখানে দেখিয়ে লাভ নেই। আমারে ক্ষমা করে দেন।আমার পেটে আপনার সন্তান— কীসের সন্তান! কার সন্তান! হারামজাদি—- তোর মায়ে আমারে নির্বংশ করবার ফন্দি আঁটছে তোরে আরেকজনের কাছে গছানোর জন্য। হিংস্র নেকড়ের মতো নেজাম আবারও সাজুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। তোর মায়ের কাছে ফেরত যা।এক তালাক,দুই তালাক—- এমন পরিস্থিতিতে মঘা বৈদ্য কেরামত আলী কায়দা মতো মিসেস আজগর আলীর কাছ থেকে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাজুর জন্য আনা কবুতর ও অন্যান্য জিনিসগুলো নিয়ে কেটে পড়লো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সাজু অমন অবস্থায় বেশিদূর এগোতে পারলো না। হুঁশ হারিয়ে মিসেস আজগরের পায়ের কাছে পড়তে পড়তে সাজু কঁকিয়ে উঠে আর্তস্বরে বললো—- মাআআআআআআ মা আআআ গো৷৷ ১০/০৫/২০২১ শেয়ার শিল্প-সাহিত্য বিষয়: