গল্প নয়

অসহায় মধ্যবিত্ত!

প্রকাশিত: ৪:০৮ অপরাহ্ণ , এপ্রিল ২০, ২০২৩

শাকেরা আরজু শিমু

তিন ভাইবোনের মধ্যে আশিক রহমান (ছদ্মনাম) সবার ছোট। দেখতে সুন্দর আর মেধাবী আশিক দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য যান দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে সাফল্যের সাথে ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফেরেন।

দেশে ফিরে যোগ দেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক জীবনের নতুন স্বপ্ন আর পথচলায় দায়িত্ব মর্যাদার সঙ্গেই কাটতে থাকে দিনগুলো।

আশিকের পরিবারে বাবা-মা ও স্ত্রী আর তিন সন্তান। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ বাবা ও মা। এক সময় মাথার উপর থেকে সরে যায় বাবা’র ছায়া। বাবা মারা যাওয়ার পর আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। এরই মাঝে চলতে থাকে আশিকের সংসার।

এর মধ্যে একদিন আশিকের ৫ বছর বয়সী বড় ছেলে আতিফ রহমানের (ছদ্মনাম) জ্বর আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় ডেঙ্গু হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে শিশুটি। হঠাৎেএকদিন নাক মুখে রক্ত বের হতে থাকে ছোট বাচ্চাটার। দিশেহারা বাবা-মা হাসপাতালে ভর্তি করেন। জানা যায়, রক্তের প্লাটিলেট ৬ হাজারে নেমে গেছে। আবারও নানা পরীক্ষা। ছোট্ট হাত দুটি সুঁচের ফুটায় কালশিটে হয়ে উঠে।

অবশেষে জানা যায়, ছোট দেহে বাসা বেধেঁছে বড় রোগ। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। বাবা-মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। একদিকে বাসায় অসুস্থ মমতাময়ী মা। একদিন পর পর ডায়ালাইসিস করাতে হয়। আরেক দিকে জানের টুকরা সন্তানের এমন রোগ দেখে দিশেহারা বাবা-মা।

প্রসঙ্গত বলে নেই, চিকিৎসা শাস্ত্রে বোন ক্যানসার হলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা স্বাভাবিক বোন বা হাড়ের টিস্যুগুলোকে নষ্ট করে দেয়। মূলত শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় এই রোগ। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে হাড়ের মজ্জা স্থাপন করে সুস্থ করা যায়। সেটাও সময় আর অনেক অর্থের বিষয়।

চোখে অন্ধকার দেখে আশিক। চিকিৎসক বলেছেন চিকিৎসা করাতে হবে দ্রুতই। ভারতে নিয়ে চিকিৎসার করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। প্রাথমিকভাবে খরচ পড়বে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ৫ মাসের মত লাগবে সময়।

কি করবে আশিক? মাকেই বা কি করবে? আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করলে তো বেতন পাবেন না। সব নিয়ে টালমাটাল। প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেয় নিজের যা আছে সবকিছু বিক্রি করবে। কারো কাছে হাত পাতবে না। কিন্তু সবকিছু বিক্রি করলেও চিকিৎসার এত খরচ তাতেও কুলোবে না। আর সময় নেই। এরপর ধার করার কথা ভাবে বন্ধুদের কাছ থেকে। বিক্রি করবে কাছে থাকা স্বর্ণ, ঘরের আসবাব। কিন্তু সাহায্য চাইতে প্রস্তুত নয় মধ্যবিত্তের মন। জানাতে চায় না নিজের কষ্ট আর বেদনার দিনগুলির কথা। মাকে হয়তো বৃদ্ধাশ্রমে দিতে হবে! এভাবেই চলছে আশিকের ভয়াবহ বিপদের দিনগুলি…।

এমন অনেক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেক পরিবার । জীবনের ছন্দ পতন ঘটেছে,উলট-পালট হয়েছে সংসার। প্রয়োজন জীবনের এমন কঠিন সময়ে বিপদগ্রস্ত লোকের পাশে থাকা, সেটা হোক অর্থ দিয়ে, সময় দিয়ে, কিংবা ছোট ছোট কাজ করে। আর প্রয়োজন প্রার্থনা করা, লড়াইটা সবাই মিলে করা। কথায় আছে দশের লাঠি একের বোঝা। আশিকের সন্তান ফিরে আসুক সুস্থ হয়ে …।

আমি এ লেখায় প্রাথমিকভাবে আতিফের সুস্থ্যতার জন্য শুধু প্রার্থনার আবেদন করছি। আমরা বিশ্বাস করি, মহান স্রষ্টা সবকিছুই করতে পারেন। জীবন মৃত্যুর মালিক কেবল তিনিই। সবার প্রার্থনা, শুভ কামনা আতিফ সুস্থ্য হয়ে বাবা-মার কাছে ফিরে আসবে সে প্রত্যাশা রইলো। এখন রহমতের রমজান মাস চলছে। দোয়া বা প্রার্থনা কবুলের ভালো সময়। সবার নিকট আবেদন করছি ছোট আতিফের জন্য আপনার প্রার্থনা ও দোয়া খুবই প্রয়োজন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ দোয়া-সৎকর্ম, দানের কথা বার বার বলেছেন। অসুস্থ্য-আত্মপীড়িতের সেবা করাই মহান আল্লাহর সেবা করা। পবিত্র সহি হাদীসেও বার বার সেবা, দান, দয়া, দোয়ার কথাই উঠে এসেছে।

পুনশ্চঃ আবারও বলছি, আশিকুর রহমান মধ্যবিত্তের আবেগ, সম্মানবোধ বা অবহেলার ভয়ে সাহায্যের হাত বাড়াননি। কিন্তু আমাদের দেশের সদয় সক্ষম মানুষেরা গোপনে হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো সহজে বেঁচে যাবে একটি কোমলপ্রাণ।

Loading