বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ থাকায় যত্রতত্র ময়লার স্তূপ,যানজট,দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি, ল্যাম্পপোষ্ট নষ্ট, চরম দূর্ভোগে পৌরবাসী: নাগরিকদের দাবী অতিসত্তর নির্বাচন

প্রকাশিত: ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ , মার্চ ৩০, ২০২৩

যশোর জেলার সীমান্ত ঘেঁষা দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। আমদানি-রপ্তানিতে দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আদায় হয় এ স্থল বন্দর দিয়েই। স্থলবন্দর ঘিরেই গড়ে উঠেছে বেনাপোল পৌরসভা। দীর্ঘদিন সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার মামলার অজুহাতে বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ থাকায় যত্রতত্র ময়লার স্তূপ,যানজট,
দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি,ল্যাম্পপোষ্ট নষ্ট থাকার কারনে বাতি না জলায় চরম দূর্ভোগে পৌরবাসী এর কারনে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। নাগরিকদের দাবী অতিসত্তর নির্বাচন দিয়ে কাঙ্খিত উন্নয়ন হোক৷

পর পর দুইজন প্রশাসক নিয়োগের পর ১১ মাস পার হলেও নেই কোন নির্বাচনের তোড়জোড়। যেখানে সংশোধিত সংবিধানে বলা হয়েছিলো প্রশাসক নিয়োগের ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা। ভোট দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে এলাকাবাসী। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছেন, সীমানা জটিলতা নিরসনে জোড় চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী কোনো নির্বাচিত মেয়রের মেয়াদ পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই পৌরসভা বিলুপ্ত হবে। সেখানে সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের জন্য সরকার মনোনীত প্রশাসক নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে একজন প্রশাসক কোনোক্রমেই একসঙ্গে ১৮০ দিনের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একজন প্রশাসকের ১৮০ দিনের মেয়াদ শেষ হলে সেখানে অন্য আরেক জনকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, অথচ নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে মামলা-মোকদ্দমা যাই থাকুক, তা নির্বাচনের পক্ষে বাধা হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পৌরসভার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা সরকার মামলার বিরুদ্ধে আপিল করায় বছরের পর বছর নির্বাচন না দিয়ে সেগুলো প্রশাসক দিয়ে চালানো হচ্ছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বেনাপোলকে পৌরসভা হিসাবে ঘোষণা করে। ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বেনাপোল পৌরসভা প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পায়। ২০০৬ সাল থেকে প্রশাসক নিয়োগে চলে পৌরসভা। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারী বেনাপোল পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম লিটন। ৫ বছর পর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়। এ সময় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সীমানা জটিলতায় আদালতে মামলা থাকায় আটকে যায় নির্বাচন। মেয়র লিটন একটানা ক্ষমতায় থেকে যান ১২ বছর।

স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ধারা ৮ এর সংশোধনক্রমে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) সংশোধন আইন, ২০২২ এর ধারা ৪ অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ বেনাপোল পৌর পরিষদকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০৯ এর ধারা ৪২ এর সংশোধনক্রমে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) সংশোধন আইন ২০২২ এর ধারা ৯ অনুযায়ী ২২ সালের ২৭ এপ্রিল শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ন চন্দ্র পালকে পৌর প্রশাসক নিয়োগ করেন। তিনি ওই সালের ৫ মে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আবারও নতুন করে ছয় মাসের জন্যে প্রশাসকের দায়িত্ব বৃদ্ধি করে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি শার্শার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইসলামকে পৌর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যা স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনের পরিপন্থী। প্রশাসকের দৈনন্দিন কাজের পর সময় পেলে পৌরসভার কাজে আসেন। ফলে পৌরসভার কাঙ্খিত উন্নয়ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী।

এদিকে প্রশাসক নিয়াগের মেয়াদ প্রায় এক বছর হতে গেলেও নির্বাচন না হওয়ায় ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। দীর্ঘদিন ধরে নতুন কোন প্রকল্প না থাকায় নতুন সড়ক, ড্রেন, সড়কবাতি, সুপেয় পানি সরবরাহসহ কাঙ্খিত উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়েছে। ময়লা আবর্জনাও ঠিকমত পরিস্কার করা হয় না। প্রতিবছর সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে এই বন্দর থেকে। বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টা গ্রামের অংশ নিয়ে ১৭.৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় দশ হাজার পরিবারের এক লাখ ২০ হাজার মানুষ বাস করেন।

যশোর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ পরিচালক মো. হুসাইন শওকত জানান, বেনাপোল পৌরসভার সীমানা জটিলতার মামলা থাকার কারণে দীর্ঘদিন নির্বাচন সম্ভব হয়নি। এরপর ২০২২ সালের ৫ মে বেনাপোল পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা যে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব সেটা প্রশাসক দিয়ে সম্ভব না। আমরা খুব দ্রুত আইনগত জটিলতা নিষ্পত্তি করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার চেস্টা চালাচ্ছি।

বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এনামুল হক মুকুল বলেন, দীর্ঘদিন এ পৌরসভার নির্বাচন বন্ধ থাকার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বেনাপোল পৌরসভাকে হেয় হতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশের লোক বেনাপোলে এসে যখন শুনতে পায় দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন হয় না, তখন আমাদের দেশের সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বেনাপোল পৌরসভার উন্নয়নের স্বার্থে অবিলম্বে নির্বাচন করতে হবে। ঠুনকো অজুহাতে বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকবে এটা মেনে নেয়া যায় না।

বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতে মামলা থাকায় দীর্ঘদিন ভোট হচ্ছে না। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার আশা পোষণ করেন এমন নেতাকর্মীরা ভোট না হওয়ায় হতাশ। দীর্ঘদিন পৌরসভার নির্বাচন না হওয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাঙ্খিত উন্নয়ন বঞ্চিত নাগরিক সমাজ। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজল ফারুকী জানান, দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে যশোরের বেনাপোলসহ আটটিতে নির্বাচন করা যায়নি। এগুলো নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন করা যাবে কি না- সে বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেটার উত্তর পাওয়া গেলে এবং নির্বাচনের যোগ্য হলে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুরোধপত্র ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না।

Loading