ঝুলে আছে বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ

প্রকাশিত: ১২:৫৯ অপরাহ্ণ , ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

গতি নেই চট্টগ্রাম বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে। আগামী একশ বছরের বন্দর হিসেবে দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য বন্দরটি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রকল্পটির কাজ ঝুলে আছে। বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণ, ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং অপারেটর নিয়োগসহ নানা বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এতে করে বন্দরটি ঠিক কখন বা কতদিন পর চালু হবে তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১শ’ বছর দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। হালিশহর সমুদ্র উপকূলের জেগে উঠা একটি চরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট প্রাকৃতিক একটি চ্যানেলে বন্দরটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত একটি মেগা প্রকল্প। এই বন্দরটি চালু করতে শুরুতে বঙ্গোপসাগরে ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করে সাগরের ঢেউ এবং জোয়ারের দাপট ঠেকাতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠা চ্যানেলটিকে খনন করে বাড়াতে হবে গভীরতা। শুরুতে ৯৩৯ একর ভূমিতে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই বন্দরের এলাকা আড়াই হাজার একরে উন্নীত করা হবে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ভূমির মাত্র ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি কিনে নিয়েছে। এই ভূমি ভরাটের মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বে টার্মিনাল বাস্তবায়ন প্রকল্প। এর বাইরে সরকারের ৮৭১ একর খাস জায়গা বে টার্মিনালের জন্য বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও জায়গাটি এখনো বন্দরের হাতে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে উক্ত খাস জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিলেও নানা আনুষ্ঠানিকতায় সবকিছু ঝুলে রয়েছে। বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কোরিয়ার কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডিয়েনইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি

লিমিটেড যৌথভাবে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোট ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি বে টার্মিনালের ডিজাইন ড্রয়িং থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কিন্তু জায়গার ব্যাপারে কোন সুরাহা না হওয়ায় পুরো আয়োজনই থমকে আছে।

নৌ–পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বে টার্মিনাল এমন একটি স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে বন্দর গড়ে তোলার শুরুতেই সাগরে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করতে হবে। সাগরে বাঁধ দেয়া ছাড়া এখানে অন্য কোন কার্যক্রম শুরু করার সুযোগ নেই। কিন্তু দেশে এই ধরণের বাঁধ নির্মাণের (ব্রেক ওয়াটার) কোন অভিজ্ঞতা নেই। একেবারে নতুন ধাচের এই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করাতে হবে। এতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পে অর্থায়নে রাজি হলেও ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের কোন প্রক্রিয়াই এখনো শুরু করা হয়নি। ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের জন্য অর্থের সংস্থানসহ আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। একেবারে মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করলেও এমন একটি ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করে সাগর বশ করতে কমপক্ষে দুই বছর সময়ের প্রয়োজন। অপরদিকে জায়গার সংস্থান হওয়ার পর ইয়ার্ড নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক কাজ করতে কমপক্ষে ৮ বছর সময় লাগবে। কিন্তু এই কাজ শুরুর ব্যাপারটিই পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। ফলে কবে নাগাদ বে–টার্মিনালে জাহাজ নোঙর করবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বে টার্মিনাল প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার দেয়া একটি তালিকা। এটি নিয়ে অনিশ্চয়তার কিছু নেই। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটে কিছু সমস্যা হলেও প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলে সাড়ে চারশ’ একর ভূমিতে। এতে করে বে টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি বড় এলাকায় পরিচালিত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ সাড়ে নয় মিটারে ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং নিতে পারে। বে টার্মিনালে ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। বে টার্মিনালে মোট তিনটি টার্মিনাল থাকবে। প্রতিটি টার্মিনালে ৩০০ মিটার লম্বা ছয়টি জেটি থাকবে। অর্থাৎ একটি টার্মিনালে ১৮শ’ মিটার লম্বা জেটি এবং পশ্চাদসুবিধা গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি টার্মিনালে একই সাথে ছয়টি জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে।- আজাদী

Loading