বিবাহ বিচ্ছেদের কষ্ট, কাটিয়ে উঠতে যা করতে পারেন

প্রকাশিত: ৯:২৪ অপরাহ্ণ , ডিসেম্বর ১৯, ২০২২

বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স এর কষ্টটা খুব গভীর। এই ধরনের কষ্ট পার করতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। বিচ্ছেদের পরে আবেগ জিনিটা মনে হয় আরো বেশি করে কাজ করে। প্রিয়জন মারা গেলে যে কষ্টটা হয় ঠিক তেমন।

এর থেকেই জন্ম নেয় দুঃখ এবং কিছু ধাপের। যেমন: অস্বীকার, রাগ, চিন্তা, বিষণ্নতা এবং গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের দুঃখটা অনেক বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের মনোবিজ্ঞানী এবং সাইকোথেরাপিস্ট ডক্টর লাবণ্য শঙ্কর বলেছেন, ‘বিচ্ছেদ মৃত্যু থেকেও ভিন্ন ধরনের একটি ক্ষতি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো কঠিন। কারণ আপনার প্রাক্তন এখনও সেখানেই আছেন। আপনি হয়ত নিজেকে প্রশ্ন করছেন, আমি আর কি করতে পারতাম?’

তিনি আরো বলেন, ‘এই সমস্যার সাথে লড়াই করা আরো কঠিন। ভবিষ্যত কেমন হবে বিচ্ছেদের পর, পারিবার ভেঙে যাওয়া এবং এর সাথে জড়িত অপরাধবোধ সব কিছু মাথায় এসে ভর করে। তাই বিবাহবিচ্ছেদেরও অনেক স্তর রয়েছে। ’

নিচে কয়েকটি বিষয় বলা হলো যার মাধ্যেমে নিজের মনকে একটু শান্ত করতে পারেন।

১. প্রথমেই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। আপনি হয়ত চিন্তা করছেন এটা কিভাবে সম্ভব? কিন্তু এটাই বাস্তবতা। জীবনে কখন কি ঘটে যাবে আপনি বুঝতেও পারবেন না। জীবনে পরিবর্তন আসবেই। এটা ভালো বা খারাপ হতে পারে। তাই প্রস্তুত থাকুন সব সময়। আপনার বিচ্ছেদ হয়েছে এটা মেনে নেওয়ার পরেই আপনি শোক করতে পারবেন এবং আস্তে আস্তে তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

২. শোকের সময়টা কোনো দৌড় প্রতিয়োগিতার অংশ নয়। যেটা হুট করেই কেটে যাবে। শোক কতদিন থাকবে তার কোনো সময় নেই। তাই সময় নিন এবং নিজেকে সময় দিন। সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে সময় লাগতে পারে। তাই বলে হতাশায় ডুবে যেতে দিবেন না নিজেকে।

৩. নিজেকে একা একটা ঘরে বন্দী করে রাখবেন না। এতে আপনার লাভ হবে না খারাপই হবে। মানুষের সাথে মিশতে হবে। নিজের কষ্টা ভাগ করে নিতে হবে। কিন্তু অবশ্যই এমন সব মানুষের সাথে মিশতে হবে যারা আপনার কাছের মানুষ যারা আপনাকে বোঝে। পরিবার আর বন্ধু পাশে থাকলে এই কষ্ট থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে আসবে।

৪. নিজের যত্ন নিতে হবে। খাওয়া, ঘুম বাদ দিলে হবে না। তাই ঘুমান, খাওয়া-দাওয়া করেন, ব্যায়াম করেন বা ঘুরতে যান।

৫. আবেগ মানুষকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। নিজের রাগ হলে চিন্তা করে দেখুন আর কী বিষয় আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে। কারণ রাগ নিজের ভেতর জমে থাকা গভীর কষ্ট থেকে জন্ম নেয়।

৬. বিভিন্ন কাজের মধ্যে নিজের কষ্ট জেগে উঠেতে পারে। হয়ত আপনি অফিসে বা মিটিং এ। যেখানেই থাকুন একটু সময় নিয়ে নিন নিজের জন্য। সেই সময় কাঁদতে মন চাইলে কাঁদুন বা চুপ করে বসে থাকুন।

৭. আপনার সন্তানের কাছ থেকে বিচ্ছেদের কথা না লুকানোই উচিত। এই কাজ করলে আপনার জন্য বিষয়টা আরো কঠিন হয়ে উঠবে। সন্তাকে সব খুলে বলুন। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন। দেখবেন অনেকটা হালকা হয়ে গেছেন।

৮. নিজের ভিতর যে অনুভূতির জন্ম হবে সেটা শিক্ষা হিসেবে নিন। আপনার জীবনে যা ঘটে গেল এবং এর ফলে যে দুঃখটা পেলেন সেখান থেকেই আপনি শিখবেন। শিখে নিজের সেরাটা বের করে আনবেন।

৯. প্রাক্তনকে দোষ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। একবার ক্ষমা করে দিতে পারলেই আপনি সামনে আগাতে পারবেন। এটা না করলে আপনি তাকে ভুলতেও পারবেন না, কিছু করতেও পারবেন না। বিচ্ছেদের পরেও সে আপনার পথ আটকে রাখবে।

১০. নিজের সন্তানের সঙ্গে বেশি বেশি করে সময় কাটান। সামনে কিভাবে এগিয়ে যাবেন সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। যেটাই করুন সেখানে ফোকাস করতে হবে। তবেই সব ভুলে ভালো থাকবেন।

১১. কোনো কিছুতেই কিছু না হলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। কারো পরামর্শ নিলে বাকিরা কি বলবে? এটা নিয়ে মোটেও ভাবতে যাবেন না।

সূত্র : ফাদারলি ডটকম।

Loading