গঠনতন্ত্রবিরোধী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার অভিযোগ কুবি শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ২:১৫ অপরাহ্ণ , নভেম্বর ২৪, ২০২২

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তারিখকে নিয়মবহির্ভূত ও গঠনতন্ত্র বিরোধী উল্লেখ করে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীর অতীতে অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা উল্লেখ করে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়া কনফারেন্সের খরচের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পরিষদ।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এবং শিক্ষকদের মতামতের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে তড়িঘড়ি করে তারিখ ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক সমাজ বিস্মিত ও হতবাক। বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে, কাউকে কোনো রকম প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আয়োজনের এমন ঘোষণা উদ্দেশ্যমূলক ও শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রবিরোধী।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের এই তারিখ ঘোষণা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ১০ অনুচ্ছেদের (খ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধারায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না এমন তিনজনের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। অথচ চলতি বছর কারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না, সেই ব্যাপারে জানতে চেয়ে বর্তমান শিক্ষক সমিতি কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সাধারণ শিক্ষকদের অবহিত করেনি। বরং গোপন বৈঠকের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনপূর্বক নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও গঠনতন্ত্রের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিগত ১০টি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ১০ ডিসেম্বর-এর আগে অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি জানুয়ারি মাসেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মনোনীত দুইজন সাধারণ সদস্য সমিতির হিসাবপত্র নিরীক্ষণ করবেন। পরীক্ষিত হিসাবপত্র কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক বিবেচিত এবং অনুমোদিত হবার পর সমিতির বার্ষিক সভায় তা পেশ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষক সমিতি হিসাবপত্র নিরীক্ষণ কমিটি গঠন ও বার্ষিক সভা আয়োজন না করেই গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

 

এছাড়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কক্সবাজারে যে বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে শিক্ষকমহলে ইতোমধ্যে বিতর্ক ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দীর বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল এবং এ অভিযোগে তাকে ও তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী কামাল উদ্দিনকে শিক্ষক সমিতি থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার ভ্রমণসহ বিভিন্ন খাতে আয়-ব্যয়ে বর্তমান সমিতির আর্থিক অসততার ব্যাপারে সন্দেহ আরো গভীরতর হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের ধারণা, আর্থিক অসততা, বিতর্ক ও প্রশ্নকে ধামাচাপা দিতেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

উপরে উল্লিখিত ঘটনা ও উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করছে। একই সঙ্গে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে গঠনতন্ত্র অনুসরণপূর্বক সাধারণ সভা আহ্বানের মাধ্যমে শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় নির্বাচন কমিশন গঠন, হিসাব নিরীক্ষণ কমিটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

সার্বিক ব্যাপারে ও অতীতের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এরপর প্রশ্ন উল্লেখ করে তার নম্বরে ক্ষুদেবার্তা দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, এটা কোনভাবেই গঠনতন্ত্র বিরোধী নয় আমরা গঠনতন্ত্র মেনেই নির্বাচনের তারিখ দিয়েছি। তারা যেকোন কিছু বলতেই পারে। আমরা গঠনতন্ত্রের মধ্যেই আছি। গঠনতন্ত্রের কোন নিয়ম ভাঙ্গা হয় নাই। নির্বাচন পেছানোর কোন সুযোগ নেই।

নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে বলেন, পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নাই এখানে। আমরা কার্যনির্বাহীর কমিটির বিভিন্ন জনকে ফোন দিয়েছি এর মধ্যে থেকে তিন জনকে করেছি। এখানে ২৬৬ জন শিক্ষককে ফোন দেয়া সম্ভব না।

কনফারেন্সের ব্যাপারে বলেন ,আমাদের নিরীক্ষন কমিটি করা আছে, আমরা যেসময় টিচার্স নাইট করবো তখন সব উল্লেখ করবো। প্রতিবছর তাই করা হয়।

Loading