গ্লোবের ভ্যাকসিন ‘আবিষ্কার’: আমাদের দায় ও দায়িত্ব

প্রকাশিত: ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ , জুলাই ৭, ২০২০

গ্লোব বায়োটেকের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ‘আবিষ্কার’ নিয়ে বেশ হইচই চলছে৷ ‘আবিষ্কারকের’ কান্না, ছাত্রজীবনে ভালো রেজাল্ট ইত্যাদি মিলেমিশে আবেগী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে যে যাচাইবাছাই প্রয়োজন তা কি আমরা করছি?করোনা ভাইরাস মহামারিতে অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যম একই রকম আচরণ করছে৷ যে-কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচার হয়, কিন্তু সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ মহামারির মধ্যে নানা ধরনের গবেষণা চলছে, নানা তথ্য উঠে আসছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে৷ একদিকে কিছু গবেষক ও বিজ্ঞানী নিজেদের নাম প্রচারের জন্য যেনতেন গবেষণার তথ্য প্রমাণ হওয়ার আগেই প্রচার করছেন, তাদের সহযোগী হিসেবে গণমাধ্যমও সেসব অপ্রমাণিত তথ্য কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজেদের ভিউ, ক্লিক, সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর জন্য৷

এমন ঘটনার ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাই যখন লানসেটের মতো প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকীও অজানা এক প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ভিত্তিতে আর্টিকেল প্রকাশ করে৷ এমনকি লানসেটের এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাধ্য হয় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার বন্ধের পরামর্শ দিতে৷ পরে সে স্টাডি পুরোটাই ভাঁওতাবাজি বলে প্রমাণিত হয়৷

আমরা বাংলাদেশেও যে যেখানে যা দাবি করছে, কোনো প্রশ্ন, প্রতিপ্রশ্ন বা যৌক্তিক যাচাইবাছাই ছাড়াই তুলে ধরছি সংবাদমাধ্যম ও টিভিতে৷ কিন্তু এটা কী নৈতিক? কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করলেন ইথানল বাষ্প শ্বাসের সঙ্গে নিলে করোনা ভাইরাস মরে যায়৷ আমরা ফলাও করে প্রচার করলাম৷ গণস্বাস্থ্য প্রটোকল ছাড়াই দাবি করলো কিট আবিষ্কারের, আমরা প্রচার করলাম, ড. বিজন কিছুদিন পর পর নিজের মতো করে মতামত জানিয়ে যাচ্ছেন গবেষণালব্ধ প্রমাণ ছাড়াই, আমরা প্রচার করে যাচ্ছি৷ এখন গ্লোব বায়োটেকও নাকি ভ্যাকসিন ‘আবিষ্কার’ করে ফেলেছে, সেটিও আমরা বিশাল কাভারেজ দিলাম৷

পাঠক-দর্শকেরা আবেগী হবেন, এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু গবেষকদের কাজ সঠিক গবেষণা করে প্রমাণলব্ধ তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ করা, সাংবাদিকের কাজ হওয়া উচিত নিজেরা বিশেষজ্ঞ না হলেও অন্তত সাধারণ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে হলেও সেটিকে প্রশ্ন করা৷ এই প্রশ্নগুলো কাউকে হেয় করা নয়, বরং কাজটাকেই সমৃদ্ধ করে৷ কিন্তু বিশ্বব্যাপী যে ট্রেন্ড চলছে বাংলাদেশের তেমনই গবেষণা বা সাংবাদিকতা বাদ দিয়ে সবাই ছুটছেন দ্রুত জনপ্রিয়তার দিকে৷ এর ফলে লাভ যারই হোক, ক্ষতিটা হওয়ার সম্ভাবনা জনগণের সবচেয়ে বেশি৷

গ্লোব বায়োটেক এপ্রিলে দাবি করে কিট আবিষ্কারের৷ সংবাদমাধ্যমেও সেটা ফলাও করে প্রচার হয়৷ কিন্তু সেটি যখন সরকারের কাছ থেকে বিশাল নেগেটিভ ফিডব্যাক পেলো, সেটা আমরা সংবাদমাধ্যমেও পেলাম না গ্লোবও আর জানালো না৷ অথচ এটা আমরা জিজ্ঞেস করলাম না, যে কিটের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি সেটিকে আমরা ‘আবিষ্কার’ কেন বলছি?

গ্লোব বায়োটেক ভ্যাকসিনও ‘আবিষ্কার’ করেনি৷ গ্লোবের পক্ষ থেকে তারপরও ‘আবিষ্কারের’ দাবি এবং সেটা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারটা অনৈতিক এবং আমার ধারণা বেআইনীও৷

বিশ্বে এই মুহূর্তে ১০০টিরও বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে৷ এদের মধ্য়ে হাতেগোনা কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে, বাকিগুলো আছে অ্যানিমেল ট্রায়াল লেভেলে৷ গ্লোবের দাবি অনুযায়ী অ্যানিমেল টেস্টিংয়ে অ্যান্টিবডি পাওয়ার হিসেব করলে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে অনেক ভ্যাকসিন ‘আবিষ্কার’ হয়ে গেছে৷একটা ভ্যাকসিন তখনই আবিষ্কার হয়ে বলা যায়, যখন এটি মানুষের শরীরে কার্যকরভাবে অ্যান্টিজেন প্রতিরোধ করতে পারে এবং সেটা

বৈশ্বিকভাবে না হোক, অন্তত সে দেশের ড্রাগ অথরিটি কর্তৃক অনুমোদন পায়৷

তিনটি খরগোশের শরীরে পরীক্ষা করে ভ্যাকসিন ‘আবিষ্কার’ হয়েছে বলাটা প্রতারণামূলক৷ তবে হ্যাঁ, তারা একটি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তৈরির দিকে অনেকদুর এগিয়েছেন৷ এটাও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বড় সাফল্য৷ সেজন্য তাদের অভিনন্দন৷

তিনটি খরগোশের ওপর প্রিলিমিনারি ট্রায়ালের সফলতার পর এখন রেগুলেটেড অ্যানিমেল ট্রায়ালের কথা বলছে গ্লোব৷ সেই ট্রায়ালে গ্লোবের কথামতোই লাগবে ছয় থেকে আট সপ্তাহ৷ এখন চলছে জুলাই মাস, ফলে কবে শুরু হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে এটি শেষ হতে পার হবে আগস্ট৷

গ্লোব দাবি করছে ডিসেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারজাত করার৷ এর মানে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর- এই চার মাসে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তিন ধাপ, সরকারের অনুমোদন, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি হয়ে যাবে?

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফেজ ওয়ানে মানুষের শরীরে ঝুঁকি তৈরি হয় কিনা দেখা হয়, ফেজ টুতে ভাইরাস ঠেকাতে এই ভ্যাকসিন কার্যকর হয় কিনা দেখা হয়, ফেজ থ্রিতে নানা বয়সের অনেক বেশি মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা হয় কারো শরীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা৷

এই ফেজগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সবার শরীরে কাজ করলেও কোনো ভ্যাকসিন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুও ঘটাতে পারে৷ আবার অন্যদের ক্ষেত্রে ঠিক থাকলেও দেখা গেলো শিশুদের শরীরে তা ঝুঁকি তৈরি করছে৷ ফলে নিরাপত্তা প্রায় নিশ্চিত না হলে ভ্যাকসিন বাজারে আনাটা ঝুঁকিপূর্ণ৷

পরিসংখ্যান বলছে স্বাভাবিক অবস্থায় করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত লাগার কথা৷ কিন্তু নানা প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন তা কমানো সম্ভব৷ সবচেয়ে দ্রুত আবিষ্কার হওয়া ভ্যাকসিন হচ্ছে মাম্পসের ক্ষেত্রে৷ সেটিতেও লেগেছে ৪ বছর৷

তবে হ্যাঁ, বিশেষ ক্ষেত্রে ঝুঁকি মেনে নিয়েও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়াই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়৷ তবে তা একেবারেই বিশেষ ক্ষেত্রে৷ পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার ভ্যাকসিন এরভেবো (Ervebo) এর ক্ষেত্রে এমন অনুমতি দেয়া হয়েছিল, কারণ যখন ভ্যাকসিনটি ডেভেলপ করা হয় ততদিনে পৃথিবীতে কোথাও আর ইবোলার প্রকোপ ছিল না৷ ফলে ট্রায়ালের জন্য পর্যাপ্ত মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল না৷ আবার যখন পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি শুরু হলো, ইবোলার মৃত্যুহার ছিল গড়ে ৫০%৷ কী ভয়াবহ বুঝতে পারছেন?এর মানে ১০০ মানুষ আক্রান্ত হলে ৫০ জনের মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত৷ ফলে উপায় না দেখে ক্লিনিক্য়াল ট্রায়াল না হওয়া ভ্যাকসিনও মানুষের শরীরে দেয়ার অনুমতি দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ কিন্তু সেটিতেও অনেক কঠোর শর্ত বেঁধে দেয়া হয়৷

সেই ভ্যাকসিনও শুরুতে ডোজ বুঝতে না পারায় মানুষের শরীরে খুব খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছিল৷ পরে নানা পরীক্ষানীরিক্ষার মাধ্যমে সেটি ঠিক করা হয়৷
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলে

বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে গ্লোবের ড. আসিফ মাহমুদের বক্তব্য শুনলাম৷ তার মূল কথা হচ্ছে, যদি সরকার থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং সব টিকঠাক এগোয়, তাহলে ডিসেম্বরে ভ্যাকসিন বাজারে আসবে৷ কিন্তু করোনার জন্য একটি ইমার্জেন্সি গাইডলাইন তৈরির কথাও বলেছেন তিনি, যা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার সমতুল্য৷

ভ্যাকিসনে যেহেতু ভাইরাসের মতোই রেসপন্স তৈরি হয়, ফলে তা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত না হলে উলটো ঝুঁকি তৈরি করতে পারে৷ কিন্তু ২-৩ শতাংশ মৃত্যুহারের রোগের ক্ষেত্রে এমন ইমার্জেন্সি গাইডলাইন আমার মতে কখনই কাম্য নয়৷ এতে সুস্থ মানুষকেও ডেকে এনে বিপদে ফেলার প্রবল ঝুঁকি থাকে৷

পরিসংখ্যান আরো বলছে, ফেজ ওয়ানে ৩৭%, ফেজ টুতে ৬৯% এবং ফেজ থ্রিতে ৪২% ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট পাস করতে পারে না৷ নভেল করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে সার্স ও মার্সের অনেক গবেষণা এবং ভ্যাকসিন উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি বেশ কার্যকর হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরও অন্তত ১৮ মাসের কথাই বলছেন বিজ্ঞানীরা৷ অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরাও শুরুতে সেপ্টেম্বরের কথা বলেছিলেন৷ তখনও এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল৷ এখন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরাও আর সেপ্টেম্বরের কথা বলছেন না৷

এবার আসা যাক কিছু তথ্যগত খটকার বিষয়ে৷

৮ মার্চ থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরুর কথা বলছে গ্লোব৷ অ্যামেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার পর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন- এনসিবিআইয়ে নিজেদের ভাইরাস সিকোয়েন্স জমা দেয়ার কথা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে গ্লোব৷ আমি যখন লেখাটি লিখছি, এনসিবিআই এর ডেটাবেইসে বাংলাদেশের মোট ৮১টি নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স প্রকাশ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে শেষ দুটি হলো গ্লোব বায়োটেকের৷ সে দুটি প্রকাশ হয়েছে ২৯ জুন ও ৩ জুলাই৷ ২ জুলাই গ্লোব সংবাদ সম্মেলন করলেও এর ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগের দিন৷ সে অর্থে এনসিবিআইয়ে তাদের সিকোয়েন্স জমা পড়েছে একটি মাত্র দুদিন আগে, অপরটি সংবাদ সম্মেলনের পরদিন৷

সেই দুই সিকোয়েন্সের দুটিই পার্শিয়াল অর্থাৎ আংশিক৷ ৮১টি সিকোয়েন্সের মধ্যে কেবল ৫টিকে পার্শিয়াল বলা হয়েছে৷ কিন্তু গ্লোবের সিকোয়েন্স দুটো ছাড়া বাকি (পার্শিয়াল এবং কমপ্লিট) সবগুলোর দৈর্ঘ্যই ২৯ হাজারের ওপরে৷ কেবল গ্লোবের দুই সিকোয়েন্সের প্রথমটি ৩,৮২২ এবং দ্বিতীয়টি কেবল ৫৪৫৷ নিজে একেবারই অজ্ঞ হওয়ায় সিকোয়েন্সিং বিষয়ে অভিজ্ঞ একাধিক বন্ধুস্থানীয় গবেষকের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পেলাম, পার্শিয়াল সিকোয়েন্সিংয়েও ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টে সমস্যা নেই৷ ফলে এ নিয়ে খটকা লাগলেও কোনো মত দিতে পারছি না৷

অতীতের নানা ভ্য়াকসিন নিয়ে ড. মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে কিছু তথ্য দিয়েছেন, যাতে অসঙ্গতি রয়েছে৷ তিনি বলেছেন, ‘১৯০৬ সাল থেকে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে, ১১৫ বছরে তারা ভ্যাকসিন ডেভেলপ করেছে৷’ ২০১৫ সালে মেক্সিকোতে প্রথম ডেংভেক্সিয়া ভ্যাকসিন নিবন্ধন হয়৷ এখন ২০টি দেশে এটি নিবন্ধন পেয়েছে৷ এটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র ডেঙ্গু ভ্যাকসিন৷ ১৯০৬ থেকে ২০১৫ হচ্ছে ১০৯ বছর৷ এটা ছোট ভুল, হতে পারে৷

কিন্তু ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন কি ১৯০৬ সাল থেকে ডেভেলপমেন্ট শুরু হয়েছে? না৷ ১৯০৬ সালে আবিষ্কার হয়েছিল যে এডিস মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়৷ জাপানের গবেষক রেন কিমুরা ও সুসুমু হোত্তা ১৯৪৩ সালে প্রথম রোগীর দেহ থেকে ডেঙ্গুর ভাইরাস আইসোলেট করতে সক্ষম হন৷ ভ্য়াকসিন আসলে ডেভেলপমেন্ট শুরু হয়েছিল ১৯২০ এর দশকের দিকে৷

ডেংভ্য়াকসিয়া নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে৷ ২০১৭ সালে মাহমারির সময় টিকা দেয়ায় ফিলিপাইন্সে বেশ কয়েকজন শিশু মারা যায়৷ এ নিয়ে ফ্রান্সের ফার্মাসিউটিক্যালস সানোফির বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দেশটি৷ মার্কিন ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএ বলছে, এই ভ্যাকসিন কেবল আগে যারা একবার আক্রান্ত হয়েছে, এবং মাহামারি আক্রান্ত এলাকায় দেয়া যাবে৷ অর্থাৎ ডেংভ্যাকসিয়াও আসলে ‘ঠেকার কাজ চালানো ভ্যাকসিন’ যাতে ঝুঁকিও রয়েছে ব্যাপক মাত্রায়৷

গ্লোব বলছে ইবোলার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে ২৭ বছর লেগেছে৷ বাস্তবে ইবোলা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৭৬ সালে৷ আগেই উল্লেখ করা এরভেবো ভ্যাকসিন প্রথম কোনো দেশে অনুমোদন পায় ২০১৯ সালে৷ অর্থাৎ, ৪৩ বছরে মিলেছে ভ্যাকসিন৷ তবে এই ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনাও রয়েছে৷

গ্লোব বলছে লাসা ফিভারের ভ্যাকসিন ৩৯ বছরে ডেভেলপ হয়েছে৷ বাস্তবে লাসা ফিভারের কোনো ভ্যাকসিনই নেই৷ প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের সময় কমেছে বলে দাবি করলেন ড. মাহমুদ, উদাহরণ দিলেন সার্স,মার্স ও জিকার৷ কিন্তু বাস্তবে এ তিনটিরও এখনও কোনো ভ্যাকসিন নেই৷ সবগুলোই এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়েই রয়েছে৷

রোগের আকার বড় আকারে বিশ্বব্যাপী না ছড়ালে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান গবেষণা বা ভ্যাকসিন উৎপাদনে আগ্রহ হারায়৷ কারণ ভ্যাকসিন গবেষণা ও উৎপাদন বিশাল বিনিয়োগের ব্যাপার৷ ফলে এত সময় নষ্ট ও খরচের পর যদি পর্যাপ্ত মানুষ আক্রান্ত না থাকে, তাহলে ব্যবসায়িক দিক থেকে এটা একেবারেই লস প্রজেক্ট৷

ফলে সার্সের মতো একবার সংক্রমণ কমে গেলে এ নিয়ে গবেষণা বা ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাজ আর এগোয় না৷ এখন কোভিড-১৯ মহামারি চলছে৷ এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী এক কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত, মারা গেছেন সোয়া পাঁচ লাখের বেশি মানুষ৷ ফলে দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কার বিশ্ব মোড়লিপনার জন্য যেমন একটি হাতিয়ার, তেমনি ব্যবসার জন্য়ও সবচেয়ে বড় পণ্য৷ এজন্যই এসব ‘আবিষ্কারের’ ঘোষণা দেওয়ার আগে, সেসব ‘আবিষ্কার’ সংক্রান্ত তথ্য প্রচার বা সম্প্রচারের আগে আমাদের সাবধানী ও সতর্ক হওয়া উচিত৷ তা না হলে অনৈতিক কাজের মাধ্যমে আমাদের সবার আরো বড় ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷DW ব্লগ

Loading