একটা রাষ্ট্রে গুম-খুন ও গনতন্ত্রের নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ , আগস্ট ৩০, ২০২২

কামাল পারভেজ

৩০আগষ্ট নাকি স্বীকৃত প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক গুম দিবস। গুম দিবসকে সামনে রেখে আমাদের দেশে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন গুলো গুম- খুন বিচার বহির্ভূত হত্যার প্রতিবাদে সভা সেমিনার মানববন্ধনের আয়োজন করে থাকে। প্রতিবছরই এই প্রতিবাদের সাথে যুক্ত হন গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হওয়া পরিবার গুলো। কেউ সন্তান কেউ স্বামী কেউ ভাই আবার কারো সন্তানের বাবা হারিয়েছে। বুকে থাকা চাপা কষ্ট গুলো বলার জন্য একটা প্লাটফর্মের মাধ্যমে রাজপথে দাঁড়িয়ে তাদের আর্তনাদ গুলো বলেই যান, কিন্তু কে শুনে কার কান্না। কারণ অপরাধী সবসময় নির্লজ্জর মতো শুনে, কিন্তু তাঁর প্রতি উত্তর দেওয়ার মত ক্ষমতা নিজেই ভূলুণ্ঠিত করে ফেলেছে। শান্তনার বানীও তাদের মুখে একটা অভিনয়ের কৌশল মাত্র। বছরের পর বছর এসব বিচারের বানী নিভৃতেই কাঁদে, সঠিক সমাধানের আশ্বাসের বাণীও তাদের কপালে জুটে না। সাধারণ জনগণ রাষ্ট্রের কাছে কতটুকু মূল্যায়িত হচ্ছে এবং একজন নাগরিকের নিরাপত্তার বিধান রাষ্ট্র সঠিক পর্যায়ে দিতে পারছে কিনা তা জনগণ সন্ধিহানে আছে। একের পর এক গুম- খুন হয়েই যাচ্ছে কিন্তু বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হয়েও কতোটা সঠিক সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছে তা আজ জনগণের বোধগম্য হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার নামে যদি একটা রাষ্ট্রের কাছে ভিক্ষা চাইতে হয় তাহলে এর চাইতে রাষ্ট্রের লজ্জা কোথায় লুকাবেন। যদি বাবার কোলে সন্তানের আশ্রয়স্হল হয়ে পড়ে বিষাক্ত সাপের ছোবল তাহলে সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকেই যাবে। ঠিক আজ আমরাও সেই পথের দিকেই দাপিত হয়ে পড়ছি।এমন পরিস্থিতিতে ৩০ আগস্ট বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম থেকে সবার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সনদ গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে গুমের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আসে এবং কাউকে গুম করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতি পায়। ২০১১ সাল থেকে ৩০আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরে গুমের ঘটনা কমে গেছে। চলতি বছরের সাত মাসে তিনজন এবং গত বছর মাত্র দুজন নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গুমের ঘটনা কমলেও আগের ঘটনাগুলোর রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় আইনের শাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করে তদন্ত এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে পূর্বের ঘটনার সুত্রপাত থেকে আলোকপাত পর্যালোচনা যা বেরিয়ে আসছে সেদিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, যেমন ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। ক্ষমতায় আসার পর অদ্যবধি ২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র পর্যালোচনায় ও বিভিন্ন সংস্থার বাৎসরিক প্রতিবেদনে জানা যায় ৬২০ জনের মত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী যাদেরকে আটক করে নিয়ে যায় তাঁরা হয়ে গেছে লাপাত্তা, তাঁর মানে হচ্ছে নিখোঁজ। ২৬৫৮ জন সাধারণ নাগরিককে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। ৭৮/৮০ লাশ পাওয়া গেলেও এবং যাঁরা ফেরত আসে তাঁরা সঠিক বিচার পায়নি, সঠিক বিচার হয়নি। এসবের দায় কার? রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা এর দায় এড়াতে পারে কি? একটা রাষ্ট্র যদি একজন সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হয় তাহলে শুধু লজ্জা নয় এই নিরাপত্তা অধিকার লঙ্ঘনে রাষ্ট্রে থাকা হর্তাকর্তাদেরকে অবশ্যই একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সকল গুম- খুনের দায়বার ও বিচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যেখানে একটি দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমলাতন্ত্রের উপর ভর করে দেশের জনসাধারণের দুঃখ কষ্ট লাগব না করে উল্টো চাপিয়ে দেওয়া হয় ঋণের বোঝা, চাপিয়ে দেওয়া আইনের উল্টো দিকটা, সেই সরকারের কাছ থেকে কি আশা করা যেতে পারে। জনগণের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের নামে স্বাধীনতার খর্বতায় আজ উল্টো গনতন্ত্রের গলা টিপে ধরে স্বাধীনতাকে হরণ করে রাষ্ট্রকে গুমতন্র বানিয়ে ফেলা হয়েছে। দেশকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে একটা পুঙ্গ অর্থনৈতিকের দিকে। দেশের জনগণ রাজনৈতিক রাজনীতির হাতিয়ারের কাছে একরকম বোদ্ধা প্রতিবন্ধীদের মতোই জীবন যাপন করতে হচ্ছে। একটা প্রবাদে বলা হয় “বোবাদের নাকি শত্রু নেই” কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টো চিত্র বোবার শত্রু হলো রাষ্ট্রযন্ত্র সরকার। একটি দেশের সরকার যখন ব্যার্থতার পথে ভিতরে অশনিসংকেতের আওয়াজে দুমড়েমুচড়ে গলা ফাফাতে থাকে এবং দাপিত হয়ে পড়ে তখন নিপিড়ন নির্যাতন অতিমাত্রায় চালানোর কৌশল চালিয়ে দেয় সাধারণ জনগণের উপর। জনগণও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে তখন রাজপথে নেমে আসে, পাল্টা আক্রমণ করতেও দিদাবোধ করেন না। শান্ত সুষ্ঠ জনগণকে রাজপথে নামানোর জন্য একমাত্র দায়ী রাজনৈতিক সরকার দলের। একটা ব্যার্থ রাষ্ট্র অথবা গুম-খুনের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের রাষ্ট্রে পরিনত করা এবং বিচার বহির্ভূত হওয়ার জন্য এ সকলের দায়ভার নিতে হবে রাষ্ট্র সরকারকে।
লেখক – সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Loading