চাঞ্চল্যকর হিরু হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহমান গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ , আগস্ট ২৩, ২০২২

মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন গঙ্গাধর পট্টি এলাকা হতে চাঞ্চল্যকর হিরু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহমান(৩২)কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
র‌্যাব-৪ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতার এবং অসংখ্য ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে যার প্রেক্ষিতে সার্বিক মূল্যায়নে ২০২১ সালে র‌্যাব-৪ ক্লুলেস অপরাধ রহস্য উদঘাটনে প্রথম স্থান লাভ করে। এছাড়াও র‌্যাব-৪ কর্তৃক ২০-৩০ বছর যাবত বিভিন্ন মামলার পলাতক যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কয়েকজন দুদ্ধর্ষ খুনী, ডাকাত ও ধর্ষককে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সিরাজুল (৩৯)’কে ১৯ বছর পর, চাঞ্চল্যকর ইদ্রিস হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নজরুল ইসলাম (৪২)কে ০৭ বছর পর, ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর অটোরিকশা চালক আলী নূর হত্যা মামলার মূল আসামী আহিনা খাতুন (২৯)কে, চাঞ্চল্যকর গর্ভবতী নিপা ও তার ৩ বছরের মেয়ে জোতি’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকির হোসেন (৪৭)’কে, চাঞ্চল্যকর সাইদুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামী নান্নু শেখ @ নূরনবীকে গ্রেফতার করা হয়। গত কয়েকদিন পূর্বে চাঞ্চল্যকর আগুনে পুড়িয়ে আম্বিয়া হত্যা মামলার দীর্ঘ ২১ বছরের পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আলম (৪০) কে ঢাকার বংশাল এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

২। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন গঙ্গাধর পট্টি এলাকায় ২২ আগস্ট ২০২২ তারিখ বিকাল ১৫.৩০ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে দীর্ঘ ১১ বছর যাবত পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহমান’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহমান পেশায় একজন পিকআপ চালক। একই গ্রামের ভিকটিম হিরু বিভিন্ন পেশায় কাজ করতো। ভিকটিম হিরু আসামী আঃ রহমান এর পিতার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে পিকআপ ভাড়া নিতো। কিন্তু গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহমান তার পিতাকে ভিকটিম হিরু এর নিকট পিকআপ ভাড়া দিতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে একদিন ভিকটিম হিরু গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহমান এর পিতার নিকট হতে পিকআপ ভাড়া আনতে গেলে সে পিকআপ ভাড়া দিবে না বলে জানায়। ভিকটিম হিরু জানতে পারে যে গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহমান হিরুর নিকট পিকআপ ভাড়া নিতে নিষেধ করছে। এই বিষয় নিয়ে ভিকটিম হিরু গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহমান’কে রাস্তায় পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং উভয় এর মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মারামারি হয়। এই ঘটনার পর থেকে গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহমান ভিকটিম হিরু এর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং গোপনে হিরুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ইং ২২/০৯/২০১০ তারিখ আসামী আঃ রহমান পিকআপ চালিয়ে মিতরা বাস স্ট্যান্ড হতে ভাঙ্গালা বাজারে যাওয়ার পথে সিংগাইর থানাধীন আমতলী নামক বাস স্ট্যান্ড এর কাছাকাছি পৌঁছালে ধৃত আসামী আঃ রহমান দুর থেকে ভিকটিম হিরুকে পাঁকা রাস্তার উপর দেখিতে পেয়ে হিরুকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিকআপটি সজোরে শরীরে উঠিয়ে দিলে ভিকটিম হিরু রাস্তার উপর পড়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়। স্থানীয় লোকজন ভিকটিম হিরুকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিম হিরুকে মৃত বলে ঘোষণা করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম হিরু এর স্ত্রী মোসাঃ মেহেরজান বাদী হয়ে আসামী আঃ রহমানের বিরুদ্ধে সিংগাইর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-২০ তারিখঃ ২৩/০৯/২০১০ ধারা- ৩০২ পেনাল কোড। পরবর্তীতে উক্ত মামলার আসামী আঃ রহমান সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। গ্রেফতারকৃত আসামী আঃ রহমান ০৪ মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পায়। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী আঃ রহমান এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট প্রদান করে। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত, মানিকগঞ্জ এর বিজ্ঞ বিচারক উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম হিরু হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ০২/০৯/২০২১ তারিখে চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী আঃ রহমান’কে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। উক্ত ঘটনার পর হতে আসামী আঃ রহমান দীর্ঘ ১১ বছর পলাতক ছিলো।

৪। আসামীর জীবন বৃত্তান্ত ঃ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৮৯ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানাধীন কালিয়াকৈর এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। দুই ভাই এর মধ্যে সে সবার বড়।

৫। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ আসামী জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর এই মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে সে নিজেকে আত্মগোপন করে। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ঘটনার পর ঢাকা চলে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে আসামী আঃ রহমান প্রবাসে চলে যায়। গত ১১ বছর ধরে আসামী আঃ রহমান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ প্রবাসে আত্মগোপনে ছিলো। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামী নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে সে পেশা পরিবর্তন করে আসছিলো। প্রথমদিকে সে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি, বাস ও ট্রাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।

Loading