প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির ‘প্রমাণ পাওয়ায়’ ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার পর ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷

হস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ছয় ব্যাংকে বুধবারই তারা নোটিস পাঠিয়েছেন৷
‘‘ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা করার সঙ্গে কোন কোন ব্যক্তি জড়িত তা প্রাথমিকভাবে ব্যাংকই বের করবে৷ এজন্য পাঁচটি দেশি এবং একটি বহুজাতিক ব্যাংকের এমডির কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে৷’’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ছয় ব্যাংকের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি, তবে ট্রেজারি প্রধানদের নির্দেশ দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে নামগুলো জানতে পেরেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
তারা বলেছেন, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ‘ট্রেজারি অপারেশনে’ অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এমডিদের কৈফিয়ত তলবের বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে কোনো ব্যাংকই সাড়া দেয়নি৷
ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তায় শুধু বলেছেন, ‘নো কমেন্টস’৷ আর বহুজাতিক ব্যাংক স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় এক এসএমএসের মাধ্যমে বলেছেন, ব্যাংকের নীতি অনুযায়ী, ‘তদন্তাধীন বিষয়ে’ কোনো মন্তব্য করবেন না তিনি৷
বাকি চার ব্যাংকের এমডিদের কেউ ফোন ধরেননি বা এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি৷
এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ সে সময়ও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পায়নি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
ব্যাংকগুলোর বিদেশি মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, বিদেশি মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ৷ আবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে কোনো কোনো ব্যাংকের৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমা (এনওপি-নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে৷
আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল৷ ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে গত ১৫ জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ এই সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর৷
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার মধ্যে গত বছরের শেষ দিক থেকে ডলারের দাম বাড়ছিল৷ এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হার প্রথমবারের মত ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় বাজারে ডলার ছাড়ার পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় সেসময় পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠতে পারলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার এই আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময় হার ১০০ টাকা ছাড়ায়৷ ১১ আগস্ট তা ১২১ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ৷ ডলারের দরে এই সংকটের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, এর পেছনে ‘কিছু কারসাজি’ চিহ্নিত করেছে সরকার৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই সময়ই মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযান ‍শুরু করে৷ কেউ যাতে দাম বাড়ানোর জন্য ডলার মজুদ না করে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়৷
গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১৩৫টি মানি চেঞ্জারে অভিযান চালিয়ে ৪২টিতে অনিয়ম পাওয়ায় কারণ দর্শানোর (শো কজ) নোটিস দেওয়া হয়৷ এছাড়া পাঁচটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিতের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এখন ডলারের দাম কিছুটা কমে এসেছে৷ বুধবার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৩ টাকায়৷ আর আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিনিময় হয়েছে৷ – বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম