সেপ্টেম্বরের শেষে লোডশেডিং মুক্ত হওয়ার আশা

প্রকাশিত: ৬:৫৯ অপরাহ্ণ , আগস্ট ১৪, ২০২২

আগামী মাসের শেষে লোডশেডিং থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এছাড়া বিশ্ববাজারে কমলে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবেও জানিয়েছেন তিনি।

রোববার (১৪ আগস্ট) ‘বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত সেমিনারে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রিশান নাসরুল্লাহের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক এবং এফইআরবির সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “আগামী মাসের শেষ দিকে আমরা লোডশেডিং থেকে বের হয়ে আসতে পারব। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আমরাও সংকটে আছি। এটি সাময়িক সমস্যা। বিশ্ব পরিস্থিতি যদি আর খারাপ না হয় তাহলে আমরা ভালোর দিকে যাব।

“আর বিশ্ববাজারে যদি তেলের দাম কমে আসে তাহলে দেশে দাম সমন্বয় করব। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কয়েকবারই এই দাম সমন্বয় করতে হতে পারে। এসময় সকলের একসাথে পাশে থাকা উচিত। চ্যালেঞ্জের সময় দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা করে লাভ নেই।”

সারা বিশ্বের মতোই বাংলাদেশের পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলেণ, “এ আঘাত এসেছে আমাদের দেশেও। প্রতিবছর আমরা নির্দিষ্ট নিয়মে অনুসন্ধান করে যাচ্ছি, এতে যে পরিমাণ গ্যাস পাচ্ছি তা দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমদানি করা হচ্ছে।

“২০০৯ সালের পর শিল্পখাতে অনেক বিনিয়োগ হয়েছে। গ্যাসের চাহিদা হুট করেই বেড়ে গেছে। দশ বছরে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে। ভোলায় বিরাট ক্ষেত্র পেয়েছি। অন শোরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সেটি সময়সাপেক্ষ।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সংকট মোকাবিলায় আমাদের চেষ্টার কোনও কমতি নেই। আমরা কয়েকমাস আগেও ভালো ছিলাম। আগে জ্বালানি তেল সস্তা ছিল, এখন বেড়েছে। আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসছি। এদের ক্যাপাসিটি চার্জ নাই। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে। এই ধরনের কেন্দ্র আগামীতে ১০ থেকে ১৬ ভাগ থাকবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের একটার পর একটা বেইজলোড বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে আসছে। আমরা খুব আশাবাদী। পরিস্থিতি যখন খারাপ, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। বিশ্বের বহুদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করেছে। বিশ্বের পরিস্থিতি ভালো না। আমরা এখনো আউট অব হ্যান্ড চলছি না। আমরা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছি তা আগেই নেয়া হয়েছে। এটি খুব সাময়িক সমস্যা।”

মুল প্রবন্ধে মোল্লাহ আমজাদ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে তারমধ্য উল্লেখযোগ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্র ঠিক সময়ে উৎপাদনে আসতে পারলেও সঞ্চালন লাইনের কারণে বসে থাকার শঙ্কা কিন্তু রয়েই গেছে।

তিনি বলেন, “পেট্রোল এবং অকটেনের দাম সর্বোচ্চ দাম বেড়েছে এবার। এর প্রভাবে বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। পুরো ইউরোপ এখন কয়লায় ফেরত যাচ্ছে। আমাদেরও এখন কয়লায় যাওয়া দরকার। ফুলবাড়ি এবং খালাসপীর কয়লা খনি থেকে কয়লা উঠানোর দ্রুত উদ্যোগ নেয়া উচিত। কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই এই কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে আগামীতে সংকট আরও বাড়তে পারে।”

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ বিইআরসি মাধ্যমে করা উচিত। পাশাপাশি ভারতের মতো নিয়মিত দাম সমন্বয় করা উচিত। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করতে হবে। এমন অনেক প্রকল্প করা হয়েছে যেগুলো কোনও কাজেই আসেনি, পড়ে আছে। সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা করা উচিত।”

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, “অফ শোরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ২০২৫-২৬ সালে গ্যাসের চাহিদা কমে যাবে, অন্যদিকে উত্তোলন বেশি হবে। তাই বিনিয়োগকারীরা এখন এই খাতে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে চায় না। এই কারণে পিএসসি কোম্পানিগুলোর জন্য আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। যাতে তারা এই খাতে আগ্রহী হয়।

“আজকের পরিস্থিতি আমরা ধরে রাখতে চাই, এর নিচে যেন না নেমে যায়। ভবিষ্যতে যাতে আরও খারাপ না হয় সেজন্য এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে এই সমন্বয় জরুরি ছিল।”

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, বাপেক্স কাজ করছে, গ্যাজপ্রম কাজ করছে। পিএসসি সংশোধন পরামর্শক কোম্পানি জমা দেবে চলতি মাসের মধ্যে। চলতি বছরের শেষ দিকে দরপত্র আহ্বানের চিন্তা করা হচ্ছে।

কয়লার বিষয়ে তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া থেকে আর ছয় বছর উঠানো যবে। এরপর অন্য জায়গায় যাবার চিন্তা করা হচ্ছে।

সেমিনারে এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক বদরূল ইমাম, অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির, সিনিয়র সাংবাদিক শাহনাজ বেগম, সদরুল হাসান, শাহেদ সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

Loading