নৃশংসতায় জিয়া ও খালেদ মোশাররফ

প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ণ , আগস্ট ১১, ২০২২

শেখ সাদী

১১ আগস্ট। ১৯৭৫। সোমবার। বেলা ১১টা। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী। বাকশালের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। একাত্তরের ১৭ এগ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী। এই সাক্ষাতের চার দিন পর তিনি মোশতাকের মন্ত্রী হন। পরে জিয়াউর রহমানেরও শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। সাক্ষাৎ করেন কর্মকমিশনের সদস্য আযহারুল ইসলাম।

আজ জার্মানি থেকে ঢাকায় মায়ের কাছে চিঠি লিখলেন শেখ রেহানা, ‘পুতলী অনেক কথা বলে। আব্বা ও তুমি কেমন আছ? আমি এখন অনেক কাজ করি। তোমার জন্য অনেক জিনিস কিনতে ইচ্ছে করে। সুন্দর সুন্দর জিনিস।

কামাল ভাইয়ের বিয়ের পর এটাই প্রথম জন্মদিন। সুন্দর এক প্রেজেন্ট দিও। দুলাভাইয়ের কাজ করে ১ মার্ক পেয়েছি। কাল বেশি কাজ করলে ৫ মার্ক দেবে।’

জিয়া ও খালেদ মোশাররফ

২০ মার্চ। ১৯৭৫। সন্ধ্যা। সরকার উৎখাতের ব্যাপারে ফারুক নিজের এবং সেনাবাহিনীর অন্যান্য কিছু জুনিয়র অফিসারের চিন্তার কথা সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে প্রকাশ করেন। অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাসকে দেয়া সাক্ষাতকারে ফারুক জানান, ‘জেনারেল জিয়া সরাসরি এই পরিকল্পনায় যুক্ত হতে অস্বীকার করেন; কিন্তু তিনি ফারুককে বলেন, জুনিয়র অফিসাররা এমন কিছু করতে চাইলে তারা অগ্রসর হতে পারে।’

১৯৭৬। লন্ডনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান করার সময় ম্যাসকারেনহাস জেনারেল জিয়াকে ফারুকের এই বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে জিয়া এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ফারুকের সঙ্গে তার এমন কথোপকথনের বিষয়টি জিয়া অস্বীকার করেননি, আবার স্বীকারও করেননি। মোট কথা, অধীনস্ত সেনা কর্মকর্তা ফারুকের কাছ থেকে এমন পরিকল্পনার কথা শোনার পরও সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান জিয়াউর রহমান ফারুককে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেননি।

বাকশালের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া

খালেদ মোশাররফ

সেনাবাহিনীর ট্যাংক কোরের মেজর নাসির উদ্দিনের জানাচ্ছেন, ‘১৯৭৫ সালের শুরুর দিকেই খালেদ মোশাররফ ফারুকের সরকারবিরোধী অভিযান পরিচালনার ইচ্ছার ব্যাপারে অবহিত হয়েছিলেন।’

১৯৭৫। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এক রাতে গোলাসহ ৬টি ট্যাংক বিশেষ ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জীবন্ত গোলাবর্ষণ মহড়ার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মেজর ফারুকের ওপর দায়িত্ব ছিল কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্যাংকগুলো বিশেষ ট্রেনে তুলে দেওয়ার কাজটি তদারক করা।  ফারুক গভীর রাতে মেজর নাসিরের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাকে জানান যে, তিনি ট্যাংক ট্রেনে না তুলে সেই রাতেই একটি অভ্যুত্থান ঘটাতে চান। নাসিরকে তার প্রয়োজন; কারণ বেঙ্গল ল্যান্সারস্এ চারশর মতো মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক আছে যারা নাসিরের নির্দেশ মেনে নেবে।

নাসির ফারুকের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে ফারুকের উপস্থিতিতেই টেলিফোন করেন। খালেদ মোশাররফ ফারুকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাকে নিবৃত্ত করেন এবং নাসিরকে নির্দেশ দেন ফারুকের সঙ্গে কমলাপুর রেলস্টেশনে যেয়ে ট্যাংক ট্রেনে তোলা তদারক করার জন্য। খালেদ এও জানান যে, ফারুক অন্য রকম কিছু করলে তিনি ফারুককে গ্রেফতারের জন্য মিলিটারি পুলিশ পাঠাবেন ‘ [নাসির উদ্দিন, পৃ: ৫৮-৫৯]

ফারুকের এমন আচরণ দেখার পরও ফারুকের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদ বা মেজর নাসির কেউ সরকার, সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ বা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে ফারুকের পরিকল্পনার কথা আদৌ জানিয়েছিলেন কী না তা জানা যায় না। এছাড়া ঢাকা সেনানিবাসে আগে থেকেই এ কথা জানা ছিল যে, ফারুক ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে সেনাবাহিনীর তখনকার তিনটি ট্যাংক নিয়ে একবার অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। তার সমর্থনে কুমিল্লা থেকে একটি সৈন্যদলও ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই দল ঢাকায় পৌঁছায়নি বলে ফারুকের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। [জামিল, পৃ: ১১৭]

১৯৭৫ সালের শুরু থেকেই খালেদ মোশাররফ ফারুকের সরকারবিরোধী অভিযান পরিচালনার ইচ্ছার ব্যাপারে জানতেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেননি! – ETV

Loading