দেশ এখন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতায়

প্রকাশিত: ৯:০১ পূর্বাহ্ণ , জুন ২২, ২০২২

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে সামনে রেখে দেশ এখন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতায় রয়েছে৷ আর এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ ও গোয়েন্দাসহ সব ধরনের বাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে৷

পদ্মা সেতুর দুই দিকে দুইটি থানার উদ্বোধন করা হয়েছে মঙ্গলবার৷ আর জাজিরা প্রান্তে শেখ রাসেল সেনানিবাস উদ্বোধন করা হয়েছে এক বছর আগেই৷ গুরুত্বপূর্ণ স্থপনা হিসেবে পদ্মা সেতু রক্ষায় সেখানে এক ব্রিগেড সেনা সদস্য রয়েছেন৷ উদ্বোধনের দিন র‌্যাবের হেলিকপ্টার নিয়ে কাজ করবে স্পেশাল ফোর্স৷

গত সপ্তাহে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সর্বশেষ সভায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়৷ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় যে আশঙ্কাগুলো করা হয় তার মধ্যে গুজব ও অসন্তোষ ছড়িয়ে নাশকতা হতে পারে উল্লেখ করা হয়৷ এই আশঙ্কায় বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী ছাড়াও নানা সন্ত্রাসী ও জঙ্গী গোষ্ঠীকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়৷ আর জন্য শুধু পদ্মা সেতু এলাকা নয় সারাদেশেই সতর্কতা জারি করা হয়৷

নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন,”আমরা ১৫ দিন আগেই থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট করেছি৷ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছি৷ তার ভিত্তিতে শুধু পদ্মা সেতু এলাকা নয়, সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করেছি৷ এখন দেশ সর্বোচ্চ নিরপত্তা সতর্কতায় রয়েছে৷ কারণ সারাদেশেই পদ্মা সেতু নিয়ে নানা আয়োজন চলছে৷ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জেরদার করা হয়েছে”৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,”মাঠ পর্যায়ে এখন নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ সড়ক, নৌ বা আকাশ সব দিকই আমাদের বিবেচনায় আছে৷ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার প্রবেশ পথ, মেস, আবাসিক হোটেল, জনসমাগমস্থল, নির্জন স্থান সবখানেই আমাদের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য তৎপরতা আছে৷
আমাদের কাছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য আছে, আর প্রতিদিনের গোয়েন্দা তথ্য আপডেট করা হচ্ছে৷ আমরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নির্বিঘ্ন ও নিশ্ছিদ্র নিরপত্তার মধ্যে করতে সার্বিকভাবে প্রস্তুত৷”

এরই মধ্যে দেশের সব জেলার এসপি এবং ডেপুটি কমিশনার ছাড়াও বিভাগীয় কমিশনারদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে৷ ঢাকা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে৷ আর পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের দুই জেলা মুন্সিগঞ্জ এবং শরীয়তপুরের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে৷ ওই দুই জেলার আবাসিক হোটেল, মেস এবং অস্থায়ী আবাসস্থলে তল্লাশি শুরু হয়েছে৷ কোনো বাসাবাড়িতে নতুন কোনো অতিথি এলে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিচ্ছে পুলিশ৷

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এক ব্রিফিং-এ বলেন,”সেতুর উদ্বোধনের নিরপাত্তায় আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ শুধু পদ্মা সেতু এলাকা নয়, সারাদেশেই ওইদিন নানা অনুষ্ঠান রয়েছে৷ সেগুলোর নিরপত্তাও দেখা হচ্ছে৷”

জানাগেছে ঢাকার মেস, হোটেলসহ যত সন্দেহজনক স্থান এবং অবস্থান আছে সবখানেই পুলিশ অভিযান শুরু করেছে৷ নদীপথ ছাড়াও সড়ক ও অনলাইনে যে কোন নাশকতারোধে সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিভিন্ন ইউনিট৷ নদীর দুই পাড় তথা মুঞ্জিগঞ্জ ও শরীয়তপুর এলাকায় স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশী শুরু হয়েছে ৷ সেতু এলাকায় সন্দেহভাজন কাউকে পেলেই তাকে আটক করে জেরা করবে পুলিশ৷

এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে নৌ পুলিশ৷ উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতু এলাকার সড়ক সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ থকবে৷ আর ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে উদ্বোধন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরি ও সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে৷ শুধু যারা লঞ্চ যোগে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসবেন সেইসব লঞ্চ জাজিরা প্রান্তে নোঙর করতে পারবে বলে জানায় নৌ পুলিশ৷

নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার ড. আ ক ম আখতারুজ্জামান বসুনিয়া লিটন জানান,”আমরা এরই মধ্যে পদ্মা নদী ও সেতুর দুই তীরে নিরাপত্তার কাজ শুরু করেছি৷ উদ্বোধনের দিন ৫৫০ জন নৌ পুলিশের ফোর্স থাকবে পদ্মা নদীতে৷ ৩০টি হাই স্পিড সি বোট টহলে থাকবে৷ আমরা ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা মনিটর করব৷ আর পদ্মা সেতুসহ ওই নৌরুটে আমরা নিরপত্তা তল্লাশি চালাচ্ছি৷”

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী নিরাপত্তায়৷ সেতু এলাকায় বসানো হচ্ছে র‌্যাবের ওয়াচ টাওয়ার৷ থাকবে ফুট পেট্রল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, বোম স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড৷ স্পেশাল ফোর্স নিয়ে রেডি থাকবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার৷
আর পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢাকায় পুলিশের সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার থেকে মনিটরিং করা হবে৷ – ডয়েচে ভেলে

Loading