হয়তোবা শেষ লেখা

প্রকাশিত: ১২:৫৬ অপরাহ্ণ , মার্চ ১৫, ২০২২

মোস্তফা কামাল পাশা

একদা প্রচারের লোভ ছিলই। তারপর হঠাৎ-ই বাপ বাপ বলে পালিয়েছে। কারণ, প্রচার বানিজ্যের মূল খামারে কপাল দোষে হেঁদিয়ে যাই একসময় । শো’ বিজ জগতের নামী বিজ্ঞাপনী এজেন্সিগুলোর ভাড়া খাটার কাজ জুটে যায়, এ’শতকের শুরুতে। কীভাবে ঠিক বলা যাবেনা ! জিঙ্গেল রচনা, আইডিয়ার বাচ্চা ফুটানোসহ আরো আরো। এমনিতেই আমার তখনকার জীবন-জীবিকা এমনটাই ছিল। নিজ পেশার নামীদামিরা কেন জানি ঘেন্না করেন, অবজ্ঞা করে মজা পান। সাহিত্যাঙ্গনও ঠিক তাই। প্রথম প্রথম অভিমান হতো, পরে সহে যায়। ধরে নিই, এটাই আমার আসল প্রাপ্য।

কোন জ্ঞানী শুভাকাঙ্খী হয়তো ফুস মন্তর দিয়েছে, “লেভেন্ডিশটা ডেভিল জিনিয়াস”! ওর সব পথে কাঁটা দাও। কোন ফাঁক ফোঁকর রাখা যাবেনা’! হ্যা, ফাঁকফোকড় রাখেন নি তাঁরা। আমার পুরো কর্মজীবনে তাই ঘটেছে। রঙছাল পাল্টে, কাজের মাত্রা ভেঙে বহুমাত্রিকতার কঠিন চর্চা ও সাধনায় কীভাবে যেন টিকে গেছি‼️ নিজের কাছেও অবিশ্বাস্য লাগে। আজ আমার দায় নেই, দায়িত্ব নেই। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সাংবাদিকতায় ভাষার শোধন, পরিবেশনা মান, লালিত্য প্রোজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছি। যতবেশি চেষ্টা তত জোরে কনুইর গুতো একলগে। পাত্তা দেয়ার সময় সুযোগ ছিলইনা।
এসব আসলে কাজ না অকাজ, হিসাব করে দেখার সময় হয়নি। ইতিহাসের গরজ থাকলে হয়তো যাছাই বাছাই হবে। দৈনিক আজাদীর চাকরি আসলে কতবড় খুঁটি, কত এর জোর, ছাড়ার পর থেকে এখনো হাড়েগোড়ে বুঝি। আগে কখনো না, বোকারা এমনই। অবশ্য বুঝার পরও সুযোগ থাকা সত্বেও পিছু ফিরিনি। কারণ আজাদীর কিছু মহান ব্যাক্তিত্ব সাহসের ভিত যথেষ্ট মজবুত করে দিয়েছেন।

অনেক দিন লেখালেখিতে নেই, প্রায় চুপ আছি, নিজেরা আন্দাজ করে নিন। আসলে আমার কাজ শেষ। সহায় সম্পদও তেমন কিছু নেই। কিন্তু চার সন্তানই বাজার দরে সুশিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিতও। ওদের ঘাড় ভেঙে খাচ্ছি দাচ্ছি টানা ৪/৫ বছর। আর কতো? চলে যেতে চাই শান্তিতে। টানা ঘুম দেব, নন্দনকাননের ঝুল বারান্দায়। দুশ্চিন্তা নেই, দায় নেই, সম্পদের বোঝা নেই, মেদ নেই, একদম হাল্কা আমি।

কিন্তু মহা ঝামেলা🤔 চার সন্তানের তিনেরই পরিবার আছে। ওদের কেউ আমাকে কঠিন লড়াই ছাড়া যেতেই দেবেনা। ভয়ঙ্কর এক মায়া, মমতার আবেগ আমার চারপাশে ঢেউ ভাঙছে। একমাত্র মেয়ে, জামাইসহ সংসার, কাজকর্ম ছুটি দিয়ে আটকে আছে। ছোট ছেলে দায়িত্বশীল সিনিয়র ব্যাাঙ্ক নির্বাহী হয়েও বাপের জন্য কচি শিশুর আচরণ করছে! সাথে ভাতিজারা, কিছু পেশাগত ও রাজনৈতিক বন্ধুও সমানে মায়া ছড়িয়ে যাচ্ছে। সন্তানদের সবারই আলাদা ফ্ল্যাট। কিন্তু এখন সবাই কাজির দেউড়ি সিডিএ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ঘিরে আছে। হায়, পরিস্থিতির শিকার না হলে পৃথিবীতে সন্তানের এমন অবিশ্বাস্য মায়া বিছানো আছে, হয়তো কখনো চেনাই হতোনা আমার।

বিশ্বাস করুন, জীবনে আগাগোড়াই সত্য চর্চার চেষ্টা করেছি। সত্য চর্চা আসলে খুবই কঠিন। সত্যের চাবুক অহেতুক কাউকে আঘাত দিলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সবাই ভালো থাকুন

Loading