রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পদক্ষেপ নিতে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ , আগস্ট ৮, ২০২১

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ‘হস্তক্ষেপ’ করতে আজ আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে সহায়তার জন্য আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি ৫৪তম আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) দিবস উপলক্ষে আসিয়ান-ঢাকা কমিটি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনিশ্চয়তা ও বিশ্বাসের অভাবহেতু রাখাইন রাজ্যে কোন ধরনের সহিংসতা হচ্ছে না- জানা সত্ত্বেও বিগত চার বছরে এ দেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের কোন বাস্তচ্যূত নাগরিক তাদের দেশে ফিরে যাননি।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও অনিশ্চয়তা দূর করার পাশাপাশি তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে এক সাথে কাজ করা উচিৎ।’ ড. মোমেন সতর্ক করে বলেন, এ দেশে এই বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যূত মানুষের উপস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে, তা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, বরং আসিয়ানসহ গোটা অঞ্চলের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসিবে আবির্ভূত হবে। তিনি বলেন, ‘এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমি, মিয়ানমারে নিরাপদ, সুরক্ষিত ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য আমাদের একটি বাস্তব অগ্রগতি অতি জরুরি।’

আসিয়ান পূর্ববর্তী সাফল্য ও ভবিষ্যত সুযোগের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ মনে করে- অঞ্চলটির পূর্ণ সম্ভাবনার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে, আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বরাজ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আসিয়ানের সাথে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে ইচ্ছুক এবং আমরা আসিয়ানের সাথে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা জোরদার করতে চাই।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ককে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আমরা আসিয়ানের সাথে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ইচ্ছুক।’ মোমেন বলেন, প্রাথমিকভাবে সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনারশিপ এর মধ্য দিয়ে এটা শুরু করা যেতে পারে এবং এটা ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ডায়লগ পার্টনারশিপ এর পথ সুগম করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর বিনিয়াগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ‘সেতু’ হতে পারে। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশ হয়ে নেপাল, ভুটান ও ভারতের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলে যেতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে- আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মতো ঢাকারও শান্তি, উন্নয়ন, নিরাপত্তা, অর্থনীতির মতো অভীন্ন এজেন্ডা রয়েছে। তাই বাংলাদেশ আসিয়ান-এর একটি শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে।

আসিয়ান-ঢাকা কমিটির সভাপতিত্বে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মিশন প্রধানগণ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন।

১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট ব্যাংককে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে আসিয়ান প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ব্রুনেই, দারুসসালেম, ভিয়েতনাম, লাও পিডিআর ও কম্বডিয়া এতে যোগ দেয়। এখন আসিয়ানের সদস্য সংখ্যা ১০।

Loading