মহেরা জমিদার বাড়ি এমডি শিপন মিয়াা এমডি শিপন মিয়াা ষ্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ , জুন ১৮, ২০২১ মো. শিপন মিয়া; জমিদার বাড়ি মানেই তো অপূর্ব কারুকাজ করা বিশাল অট্টালিকা। যার দেয়ালের পরতে পরতে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। শানশওকত আর চাকচিক্যের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে দেশের বেশিরভাগ জমিদার বাড়িই এখন পরিত্যক্ত। সেক্ষেত্রে অনন্য মহেরা জমিদার বাড়ি। এখনও কারুকাজ করা বাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে সদর্পে। মহেরা জমিদার বাড়ির টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবস্থিত। যমুনা, ধলেশ্বরী ও বংশী নদীবিধৌত এ জেলার সবচেয়ে বড় ও মনোমুগ্ধকর জমিদার বাড়ি এটি। এতটা সময় পেরোলেও ঐতিহ্যপ্রেমী মানুষেরা এখনো ছুটে যায় নিদর্শনগুলোর কাছে। গবেষকরা খুঁজে দেখেন, জানার চেষ্টা করেন চোখে না দেখা জীবনকে। ১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে জমিদার বাড়ীটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়ীতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ীর কূলবধূ সহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে (১৯৭১)। পরবর্তীতে তারা লৌহজং নদীর নৌপথে এ দেশ ত্যাগ করেন। এখানেই তখন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। এ জমিদার বাড়ীটি পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় (১৯৭২)। এবং পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয় (১৯৯০)। এই জমিদার বাড়ির সামনে প্রবেশ পথের আগেই রয়েছে ‘বিশাখা সাগর’ নামে বিশাল এক দীঘি এবং বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি সুরম্য গেট। এছাড়াও মূল ভবনে পিছনের দিকে পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামে আরো দুইটি পুকুর রয়েছে এবং শোভাবর্ধনে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। বিশাখা সাগর সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে বিশাল আম্র কানন ও বিশাল তিনটি প্রধান ভবনের সাথে রয়েছে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘিসহ ও আরো তিনটি লজ। চৌধুরী লজঃ জমিদার বাড়ি প্রবেশের পরেই মূল ফটক দিয়ে দেখা যায় চৌধুরী লজ। এটির গোলাপি রঙের ভবনটির পিলার গুলো রোমান স্থাপত্য শৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দর নকশাখচিত এই ভবনের ভেতরে রয়েছে ঢেউ খেলানো ছাদ। দোতলা বিশিষ্ট এই ভবনটির সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান ও সবুজ মাঠ। মহারাজ লজঃ বাইজেনটাইন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মহারাজ লজ ভবনের সামনে ছয়টি (৬) টি কলাম রয়েছে। সেখানে গোলাপি রঙের মহারাজ লজের সামনে রয়েছে সিঁড়ির বাঁকানো রেলিং ও ঝুলন্ত বারান্দা যা ভবনের শোভা বৃদ্ধি করেছে। ভবনটিতে মোট কক্ষ আছে বারো (১২) টি, সামনে বাগান ও পেছনে একটি টেনিসসহ কোর্ট রয়েছে। এই ভবনটি বর্তমানে শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আনন্দ লজঃ মহেরা জমিদার বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবন হলো আনন্দ লজ। নীল ও সাদা রঙের মিশ্রনে ভরা ভবনটির সামনে আট (৮) টি সুদৃশ্য কলাম রয়েছে। তিন তলা বিশিষ্ট ঝুলন্ত বারান্দা এ ভবনকে করেছে আরো দৃষ্টিনন্দন। আনন্দ লজের সামনে হরিণ, বাঘ ও পশু-পাখির ভাস্কর্যসহ একটি চমৎকার বাগান আছে। কালীচরণ লজঃ জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির শেষের দিকে নির্মিত এই কালীচরণ লজ অন্য ভবন থেকে অনেকটা আলাদা। ইংরেজি ‘ইউ’ (U) অক্ষরের আদলে এই ভবনটি ইংরেজ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। অন্যোন্য স্থাপত্য শৈলীর জন্য বিকেল বেলা ভবনের ভেতর থেকে সুন্দর আলোর ঝলকানি দেখা যায়। তোমরা যদি সভ্যতা এবং ঐতিহ্যের মতো করে একদিন যেতে চাও মহেড়া জমিদার বাড়িতে তবে বাড়ির বড় কাউকে সঙ্গে করে একদিন বেড়িয়ে পরো, চলে যাও মহাখালি বাস টার্মিনালে। ওখান থেকে তোমাদের চড়তে হবে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী যে কোনো বাসে, এরপর নাটিয়াপারা বাসস্ট্যান্ডে নেমে পরবে। সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে রয়েছে মহেড়া জমিদার বাড়িটি, এটুকু রাস্তা অটোরিকশা করেই যাওয়া যাবে। ট্রেনে গেলে: ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল গামী সকালের ট্রেন সমূহ: ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ে ৬:০০ টায় পৌঁছে ৭:৫৭ মিনিটে। একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০:১০ এ ছেড়ে টাঙ্গাইল পৌঁছে ১২:০৭ মিনিটে জামালপুর এক্সপ্রেস সকাল ১০:৩০ এ ছেড়ে টাঙ্গাইল পৌঁছে ১২:৫০ মিনিটে। (নোট: ট্রেন লেট ও হতে পারে) টাঙ্গাইল নেমে ওখান থেকে বিভিন্ন বাহনে চেপে যেতে পারবেন। খাওয়া দাওয়া করার জন্যে প্রবেশ পথের পাশেই রেস্টুরেন্ট আছে সুলভ মূল্যে খেয়ে নিতে পারবেন এ বাড়িতে প্রবেশ করতে হলে জনপ্রতি ৮০ টাকায় টিকেট কাটতে হবে। শেয়ার সারা দেশ বিষয়: