ফাঁসতে পারেন প্রভাবশালীরা

প্রকাশিত: ১১:২০ পূর্বাহ্ণ , সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা মামলার ঘটনায় ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এরোই মধ্যে গ্রেফতার যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলামকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল তাকে আদালত সাত দিনের রিমান্ড দিয়েছে। এছাড়া রিমান্ডে থাকা নবিরুল ও সান্টুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা চঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছেন বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি বিচারবিভাগীয় তদন্ত টিম গঠনের দাবি জানিয়ে বলেছে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। এদিকে রিমান্ডে থাকা আসামীরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে করে প্রভাবশালী মহলের কয়েকজন নেতা ফেঁসে যেতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

এদিকে, রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউএনও ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে গতকাল হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন তিনি। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ওয়াহিদার ডান দিকের অংশটা এখনো অবশ আছে। আশা করছি, চিকিৎসায় আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা গর্বিত যে, নিউরোসায়েন্স অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অপারেশন ও চিকিৎসাটা করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর দীন মোহাম্মদ সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন।

তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। অপারেশন পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা আজ (সোমবার) শেষ হবে। এখনো ইনফেকশন দেখা যায়নি। আশা করা যায়, পুরোপুরি তিনি ভালো হবেন, ইকফেক্টেড (সংক্রমিত) হবেন না। ইউএনও ওয়াহিদাকে দেশের বাইরে নেয়ার ব্যাপারে কোনো প্রস্তুতি রযেছে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। দেশের এই উন্নত বিশেষায়িত হাসপাতালে তার ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় তবে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানায়, গতকাল বিকেলে দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান সরকারের আদালতে হাজির করা হয় মামলার প্রধান আসামি ও যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা আসাদুল ইসলামকে। এ সময় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে ৭ দিনের রিমান্ডের আদেশ প্রদান করেন আদালত। এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় র‌্যাব আসাদুলকে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ দিনাজপুরের পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে আসাদুল ইসলামকে হস্তান্তর করে। দিনাজপুর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ইমাম জাফর বলেন, আমরা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসাদুলের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলাটি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। এর আগে গত শনিবার এ মামলার অপর আসামি রংমিস্ত্রি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু রায়কেও ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসু। গতকাল সকালে রিমান্ডে নিয়ে তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসময় তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়েছেন বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে জিঙ্গাসাবাদের জন্য আটক আরো ৪ জনকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আটককৃত মধ্যে দু’জন সরকারী কর্মচারি থাকায় জেলা প্রশাসক তথা সিভিল প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ইউএনও’র উপর হামলা র‌্যাব পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের এখন পর্যন্ত নেয়া কার্যক্রম নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। র‌্যাব তাদের ব্রিফিংয়ে গ্রেফতার আসাদুলের বরাত দিয়ে এটি একটি নিছক চুরির ঘটনা জানিয়েছে। অবশ্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের আরো অধিক তদন্তের পর ইউএনও’র উপর হামলার মোটিভ পাওয়া যাবে। এছাড়া স্থানীয় সংসদ (দিনাজপুর -৬ আসন) শিবলি সাদিক ইতিপূর্বে জিঙ্গাসাবাদের জন্য আটক জাহাঙ্গীরকে সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ঘটনা কেবল চুরি নয়, এর পিছনে আরো বড় ধরনের কোন ঘটনা এবং পিছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের গ্রুপিংয়ের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। উল্লেখ্য ২০১৫ সালে ঘোড়াঘাট সংলগ্ন নবাবগঞ্জ উপজেলার ইউএনওকে দিন দুপুরে আহতের ঘটনায় যুবলীগের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে এসেছিল। রাজনৈতিক কারণে তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাই অভিযুক্তদের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। মামলাটি এখন চলমান রয়েছে। ফলে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত থাকার এবং এর পিছনে স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী নেতার জড়িত থাকার বিষয়টিকে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে গত শনিবার ঘোড়াঘাট অফিসার্স ক্লাবে সাংবাদিক সম্বেলন করে দায়ীদের শাস্তি দাবী করেছেন উপজেলায় কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারী শিক্ষকরা।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিনগত রাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ইউএনওর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয় এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ## ইনকিলাব

Loading