চকরিয়ায় মা-মেয়েকে বেঁধে নির্যাতন, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ৯:৩৯ অপরাহ্ণ , আগস্ট ২৩, ২০২০

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। রোববার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (উপ সচিব) শ্রাবন্তী রায়কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে আরও রয়েছেন- চকরিয়ার এসিল্যান্ড ও হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চোর সন্দেহে একই পরিবারের চারজনকে রশিতে বেঁধে নির্যাতনের পর পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা ও ইউপি চেয়ারম্যান। গত শুক্রবার (২১ আগস্ট) চকরিয়া উপজেলা হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটলেও পরে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা-মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

পরে এ ঘটনায় স্থানীয় মাহমুদুল হক বাদি হয়ে গরু চুরির অভিযোগে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকার আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার, তার মেয়ে সেলিনা আক্তার, রোজিনা আক্তার, ছেলে আরমান ও পেকুয়া উপজেলার ছুট্টু নামে ওপর একজনকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাদের আদালতে সোপদ করলে আদালত তাদেরকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।

চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, এক পরিবারের তিন নারী সদস্যসহ গরু চোর সিন্ডিকেটের ৫ সদস্যকে এক কিলোমিটার ধাওয়া করে স্থানীয় জনতা আটক করেছে বলে জানতে পারি। পরে পুলিশ পাঠিয়ে এসময় ৩ নারী ও ২ পুরুষ সদস্যকে স্থানীয় ইউপি কার্যালয় থেকে আটক করে বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তিনি আরো বলেন, আটকের সময় তাদের কাছ থেকে একটি সিএনজি ও গরুর বাচুর ও একটি অজ্ঞান করার স্প্রে মেশিন উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় একটি সিএনজি পহরচাঁদা এলাকায় অবস্থান করে। এসময় সিএনজি চালক গাড়ি নষ্ট হয়েছে- এমন ভান করে গাড়ি মেরামত করতে থাকে। ওইসময় গাড়িতে কয়েকজন নারী দেখে কারও সন্দেহ হয়নি। পরে ওই নারীরা রাস্তার পাশে থাকা একটি গরু সিএনজিতে তুলে নেয়। ঘটনাটি মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক দেখে ফেললে শে তাদের পিছু নেয়। এক পর্যায়ে সিএনজিটি রেল লাইন এলাকার কাদা মাটিতে আটকে গেলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে এবং রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আসে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিরানুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তদের আমি পরিষদে এনে মেরেছি বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে- তা সঠিক না। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় ফিরে আসি। পরে গরু চোর আটকের ঘটনাটি জানতে পারি। পরে চকরিয়া থানা পুলিশ ও ইউএনওকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ঘটনার দিন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। আমি তখন গরু চোরদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এতে উপ-সচিব শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চকরিয়ার এসিল্যান্ড ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি আমি নিজেই খতিয়ে দেখছি।

নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্তরা যদি মনে করে তাদের অপমান বা হয়রানি করা হয়েছে, তাহলে তাদের অভিযোগও আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Loading